একটি সফলতার গল্প ও কেএফসির ইতিহাস

প্রত্যেক মানুষই সম্ভাবনাময় । তুমি যদি পরিশ্রম করো, তুমি যদি যোগ্যতা প্রমানের চেষ্টা করো তাহলে তুমি তোমার জীবনে কখনো না কখনো সফলতা অবশ্যই পাবে। KFC-র সফলতার গল্প তোমাদের চার পাশেই এরকম অসংখ্য উদাহরন আছে। এই…

Advertisement

প্রত্যেক মানুষই সম্ভাবনাময় । তুমি যদি পরিশ্রম করো, তুমি যদি যোগ্যতা প্রমানের চেষ্টা করো তাহলে তুমি তোমার জীবনে কখনো না কখনো সফলতা অবশ্যই পাবে।

KFC-র সফলতার গল্প

তোমাদের চার পাশেই এরকম অসংখ্য উদাহরন আছে। এই রকমই একজন পরিশ্রমি মানুষ স্যান্ডারস। সেই হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তার মহান কীর্তি, ফ্রাইড চিকেন রেসিপি। যদিও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এবং খাওয়ার মান বিবেচনায় সম্প্রতি কে.এফ.সি (KFC) তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশে।

যাই হোক, সেই সংগ্রামী, উদ্যমী এবং সফল উদ্যোক্তা হারল্যান্ড স্যান্ডারস। ৬৫ বছর বয়সে তার জীবনের মোড় পাল্টে যায় এক অদ্ভুত নাটকীয় ঘটনায়। জন্ম আমেরিকার ‘ইন্ডিয়ানা’ স্টেটে ১৮৯০ সালে। আর বাড়িটা ছিল ইন্ডিয়ানার হেনরিভ্যালি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে।

Advertisement

মাত্র ছয় বছর বয়সে পিতাকে হারান তিনি। তারপরই সংসারের সকল চাপ নিজের কাঁধের উপর উঠে আসে। পরিবার চালাতে তার মা বাইরে কাজ করতে যেতেন, মায়ের অনুপস্থিতিতে স্যান্ডারসকে দেখে শুনে রাখতে হত তার ছোট ভাই ও বোনটিকে।

মাত্র সাত বছর বয়সেই বেশ ভাল রান্না শিখে গিয়েছিলেন তিনি। কারণ ছোট ভাই-বোনের খাওয়ার দায়িত্ব তো ছিল তার কাঁধেই। স্যান্ডারসের যখন ১২ বছর বয়স তখন তার মা নতুন বিয়ে করলে সৎ বাবার আশ্রয়ে খুব বেশিদিন কাটাতে পারেননি তিনি।

পরবর্তীতে একটা ফার্ম হাউজে কাজ নিয়ে চলে আসেন অনেকটা দূরে। এত চাপের পর পড়াশোনাও খুব বেশিদিন চালিয়ে যেতে পারলেন না। এর পর থেকে শুরু হয় তার প্রতিকূল পথচলা।

Advertisement

অনেক চড়াই উৎরাই পাড় করে চলে তার জীবন। কখনো ট্রেনের ফায়ারম্যান, কখনো ক্ষেতমজুর, কখনো বা বিমা কোম্পানির সেলসম্যান, গাড়ির টায়ার বিক্রেতা, ফিলিং স্টেশনের কর্মচারী এবং সর্বশেষ একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী।

১৯৩০ সালের দিকে স্যান্ডারস কেন্টাকিতে একটি পেট্রোল স্টেশনের পাশে নিজেই রান্না করে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য বিক্রয় করতে লাগলেন। তিনি সেখানে বিভিন্ন সাউথ আমেরিকান খাওয়ার পরিবেশন করতেন। ধীরে ধীরে আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে তার খাবারের খ্যাতি। ধীরে ধীরে জায়গাটিকে পুরো রেস্টুরেন্টে রূপ দেন।

তার প্রথম সফলতা আসে যখন ১৯৩৯ সালের দিকে সকলের সামনে তার সিগনেচার রান্না উপস্থাপন করেন নতুনভাবে। তিনি নিজেই একটি এমন প্রেসার কুকার তৈরি করে নেন যা ছিল প্রচলিতগুলোর চেয়ে আলাদা। কিন্তু এই প্রেসার কুকারে ফ্রাইড চিকেনের টেক্সচার বা মচমচে ভাবটা খুব ভালভাবেই আসে।

Advertisement

এর পরের দশ বছর স্যান্ডারসের বেশ ভালভাবেই কেটেছিলো। এরপর ১৯৫০ সালে কেন্টাকির গভর্ণর তাকে ‘কর্নেল’ উপাধি দেন যা একটি স্টেটের পক্ষে ছিল সর্বোচ্চ সম্মান। এরপর সেন্ডারস নিজের আইকনিক লুকের জন্য সাদা স্যুট এবং কেন্টাকি কর্নেল টাই পরিহিত হয়ে সবার সামনে ধরা দেন। আর এই পোশাকই তাকে আধুনিক যুব সমাজে অন্যতম আইকন হিসেবে জাহির করে।

১৯৫২ সালের দিকে স্যান্ডারস নতুন করে ভাবতে শুরু করেন তার এই ব্যবসা নিয়ে। তার এক ব্যবসায়িক বন্ধু পিট হারমেনের সাথে চুক্তি করেন যে তার তৈরি “Kentucky Fried Chicken” এর প্রতিটি মূল্যের সাথে রয়্যালটি হিসেবে চার সেন্ট করে পাবেন। এই চুক্তির ব্যাপক সাফল্যের পর সেন্ডারস আরও কিছু রেস্টুরেন্টের সাথে অনুরূপ চুক্তি করেন। সবকিছু বেশ ভালভাবেই চলছিল।

কিন্তু হঠাৎই তার উপর একটি বিপদ নেমে আসে। সরকারি জায়গা অধিগ্রহণের বেড়াজালে পড়ে বিশাল ক্ষতিতে বিক্রয় করতে বাধ্য হন তার রেস্টুরেন্ট। হাতে পড়ে থাকে শুধুমাত্র ১০৫ ডলারের সিকিউরিটি চেকের অর্থ।

কিন্তু হার মেনে নেয়ার পাত্র নন স্যান্ডারস। তার চার বছর আগে ফেলে আসা ব্যবসায়িক চিন্তাকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য বদ্ধ পরিকর হলেন। তার গাড়ি ভর্তি করে নিলেন প্রেসার কুকার, মুরগি, ময়দা, তার নিজের তৈরি রেসিপির অন্যান্য উপকরণ।এরপর তিনি ঘুরতে লাগলেন রেস্টুরেন্ট থেকে রেস্টুরেন্ট। উদ্দেশ্য একটাই, যদি ভাল লেগে যায় তার রেসিপি, তাহলেই চুক্তিবদ্ধ হবেন।

কাজটা শুনতে যতটাই সহজ মনে হোক না কেন, বস্তুত ছিল অনেক কষ্টসাধ্য। তার যেতে হয়েছিল অনেক রেস্টুরেন্টের দ্বারে দ্বারে। কেউ শুনেই হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল, কেউ বলেছিল পাগল, আবার কেউ রেসিপি পছন্দ করেও কোনো প্রকার চুক্তি করতে জানিয়েছিল অস্বীকৃতি।

কিন্তু থেমে থাকেননি তিনি। নিজের ইচ্ছা পূরণে ছিলেন বদ্ধ পরিকর। তার চেষ্টা এক সময় সফলতায় রূপ নিল। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তার অনেক চেষ্টায় প্রায় ৬০০টি রেস্টুরেন্টের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পেরেছিলেন। সেই বছরই অক্টোবর মাসের দিকে ‘জেক সি মেসি’ নামে একজন ধনাঢ্য ব্যক্তির কাছ থেকে আবেদন পান তার রেসিপির রয়্যালিটির অধিকার কিনে নেয়ার।

শুরুর দিকে তিনি কোনো আগ্রহই দেখাননি। কিন্তু পরবর্তীতে চিন্তা করে দেখলেন, তার এই রেসিপি শুধুমাত্র পারিবারিক উত্তরাধিকার হিসেবে না রেখে পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিলে তার যশ আর খ্যাতি হয়ে থাকবে চিরন্তন।

১৯৬৫ সালের জানুয়ারি মাসে তার জগত ভোলানো রেসিপির অধিকারস্বত্ব দুই মিলিয়ন ডলারে বিক্রয় করেন তিনি। Kentucky Fried Chicken চুক্তিপত্র অনুযায়ী কোম্পানি হিসেবে নিজস্ব রেস্টুরেন্ট খুলবে পুরো বিশ্বে এবং কোনো প্রকার ছাড় দেয়া হবে না রেসিপির ব্যাপারে।

স্যান্ডারস সারা জীবনের বেতন হিসেবে ৪০,০০০ ডলার পাবেন, অধিকাংশ শেয়ারের মালিক হবেন এবং কোম্পানির প্রচারে অংশগ্রহণ করবেন কোম্পানির ব্র্যান্ড এম্বেসেডর হয়ে।

১৯৮০ সালের তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত স্যান্ডারস ছুটে বেড়িয়েছে মাইলের পর মাইল তার হাতে গড়া রেসিপির কদর আর মান দেখার জন্য। কখনো গুণাগুণের ব্যাপারে সমঝোতা করেন নি তিনি।

সব সময় নিজের তৈরি রেসিপি নিয়ে মানুষের মনে বেঁচে থাকতে চেয়েছেন। তার চাওয়া যে সফলভাবে পাওয়াতে পরিণত হয়েছে তা তো সময়ই প্রমাণ করেছে।

ব্যাপারটা অনেকটা এমন হলো যে বুড়ো বয়সে ভিমরতি বলে একটা কথা প্রচলিত রয়েছে আমাদের সমাজে।

অধিকাংশ লোকেরাই চিন্তা করে যে চাকরি শেষ মানে এখন চুপচাপ ঘরে বসে থাকা আর মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা। কিন্তু এখানে হারল্যান্ড স্যান্ডারস ব্যাতিক্রমি কিছু করে দেখিয়েছেন। এই ছিলো হারল্যান্ড স্যান্ডারস এর সংগ্রামি জীবন।

কোনো এক মহাপুরুষ বলে ছিলেন “ব্যার্থতাই সফলতার চাবি কাঠি”। তাই মন থেকে কিছু চেয়ে সঠিকভাবে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *