চল তড়িৎ
চল তড়িৎ আলোচ্য বিষয়ঃ১.তড়িৎ চালক শক্তি,২.রোধের সূত্রাবলি,৩.আপেক্ষিক রোধ,৪.আপেক্ষিক রোধের গুরুত্ব। তড়িৎচালক শক্তি কোনো তড়িৎ উৎস একক ধনাত্বক আধানকে বর্তনির এক বিন্দু থেকে উৎস সহ সম্পূর্ণ বর্তনি ঘূরিয়ে আবার ঐ বিন্দুতে আনতে যে পরিমান কাজ সম্পন্ন…
চল তড়িৎ
আলোচ্য বিষয়ঃ
১.তড়িৎ চালক শক্তি,
২.রোধের সূত্রাবলি,
৩.আপেক্ষিক রোধ,
৪.আপেক্ষিক রোধের গুরুত্ব।
তড়িৎচালক শক্তি
কোনো তড়িৎ উৎস একক ধনাত্বক আধানকে বর্তনির এক বিন্দু থেকে উৎস সহ সম্পূর্ণ বর্তনি ঘূরিয়ে আবার ঐ বিন্দুতে আনতে যে পরিমান কাজ সম্পন্ন করে, তথা উৎস যে শক্তি ব্যায় করে, তাকে ঐ উৎসের তড়িৎ চালক শক্তি বলে।
E=W/Q
একক Jc^-1 or V
শর্ত হচেছ একক ধনাত্বক আধানকে ঘূরিয়ে আনতে হবে । অর্থাৎ 1c চার্জকে নিয়ে আসতে হবে ।
আমরা ধরে নেই যে,
এ সার্কিটে (-) মাইনাস পয়েন্ট থেকে ইলেক্ট্রনটাকে তির চিন্হিত দিকে আনা হলো। এখন একক ধনাত্বক আধানকে,অর্থাৎ +1c (এখানে এক কুলম্ব চার্জ ধরে নিছি) চার্জকে ঘূড়িয়ে আনতে যে কাজ করা হয়, তাকে আমরা বলে থাকি তড়িৎ চালক শক্তি। যাকে E দ্বারা সূচিত করা হয়।
আমরা ধরে নেই যে Qc চার্জকে বর্তনির এক বিন্দু থেকে ঘূরিয়ে আবার অন্য বিন্দুতে আনতে W পরিমান কাজ করতে হয়।
Q=W
অতএব একক ধনাত্বক আধানকে ঘূরিয়ে আনতে কাজ করতে হয়
.: 1=W/Q
এই W/Q টাই হচ্ছে সংঘ্যা অনুসারে E, এর মানে তড়িৎ চালক শক্তি । যার একক আমরা V ভোল্টেজ লিখতে পারি।
অথবা, W এর একক হচ্ছে J
Q এর একক হচ্ছে c
.: J/c
c উপরে উঠলে Jc^-1
সুতরাং E=W/Q
একক Jc^-1 or V
বিভব পার্থক্য
বৈদ্যুতিক বর্তনির দুটি বিন্দুর মধ্যে দিয়ে একক ধনাত্বক আধান স্থানান্তরিত হলে যে পরিমান তিড়িৎ শক্তি অন্য শক্তিতে ( যেমন তাপ ও আলো ) রুপান্তরিত হয় তার পরিমানই ঐ দুই বিন্দুর বিভব পার্থাক্য।
V=W/Q
আমরা প্রচলিত ভাষায় বিভব পার্থাক্য বলতে বুঝে থাকি, একটি পরিবাহির দুই প্রান্তে যে ভোল্টেজ রয়েছে বা বৈদ্যুতিক প্রেশার রয়েছে তার পার্থক্য।
আসলে এ বিভব পার্থক্য যদি না থাকে তবে এ পরিবাহিতে কারেন্ট কিন্তু পরিবাহিত হবে না। এখানে যে কথাটা বুঝাচ্ছে “তড়িৎ চালক শক্তি” এর মতই সংঘ্যাটি।
এখানে যে বিভব পার্থক্য এর সংঘ্যার মূল কথাটা হচ্ছে,
ধরি,
এটা একটা পরিবাহী এর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে একটি চার্জ পাঠাবো (1c)। এক প্রান্ত থেকে যদি আমি অপর প্রান্তে চার্জ পাঠাতে চাই তবে আমাকে কাজ করতে হবে (W)। যদি একক আধান (1c) কে পাঠাতে চাই তবে আমাকে কাজ করতে হবে W/Q।
এই (W/Q) টাই হচ্ছে আসলে ভোল্টেজ। যে ভোল্টেজটার জন্য পরিবাহীর দুই প্রান্তের মধ্যে একটা পার্থাক্য মেনে চলে।
অর্থাৎ যেটাকে আমরা বলে থাকি বৈদ্যুতিক চাপের পার্থক্য মেনটেন করে। যদি সেই চাপ না থাকে তবে ভিতর থেকে ইলেকট্রন তথা শক্তি পরিবাহীত হবে না।
বিভব পার্থাক্যকে (V) দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
রোধঃ পরিবাহীর ভিতর থেকে ইলেকট্রন প্রবাহকে বাধা প্রধান করার যে ক্যারেকটর সেটাই রোধ। কোনো পরিবাহীর রোধ চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
১.পরিবাহীর দৈর্ঘ্য একে (l) দ্বারা সূচিত করা হয়
২.পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল (A) অর্থাৎ পরবিাহী কত মোটা বা চিকন
৩.পরিবাহীর উপাদান। অর্থাৎ এটা কিসের তৈরি লোহা না তামা
৪.পরিবাহির তাপমাত্রা
রোধ সংক্রান্ত দৈর্ঘ্যের সূত্রনির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট উপাদানের পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল স্থির থাকলে পরিবাহীর রোধ এর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক।
:. R∝L
আমরা জানি রোধ ইলেকট্রন প্রবাহে বাধা প্রদান কারে। এই রোথ নির্ভর করে পরিবাহীর দৈর্ঘ্যের উপর অর্থাৎ আমার তারের দৈর্ঘ্য যত বাড়বে রোধ ও তার সমানুপাতিক হারে বাড়বে।
অর্থাৎ আমি যদি দৈর্ঘ্য এক গুন বাড়াই তবে রোধ ও এক গুন বাড়বে।
আমি যদি দৈর্ঘ্য দুই গুন বাড়াই তবে রোধ ও দুই গুন বাড়বে।
আমি যদি দৈর্ঘ্য তিন গুন বাড়াই তবে রোধ ও তিন গুন বাড়বে
আর একটু ক্লিয়ার হওয়া যাক।
যখন দৈর্ঘ্য ৫মি তখন রোধ ১০ ওহম
যখন দৈর্ঘ্য ১০মি তখন রোধ ২০ওহম
এভাবেই সমানুপাতিক হারে বাড়বে এখানে ক্ষেত্রফল কিন্তু স্থির।
ক্ষেত্রফল
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট উপাদানের পরিবাহীর দৈর্ঘ্য স্থির থাকলে পরিবাহীর রোধ এর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের ব্যাস্তানুপাতিক।
এখানে পরিবাহীর ক্ষেত্রফল যত বাড়বে(মোটা করবে)তত রোধের পরিমান কমে আসবে।
ক্ষেত্রফল যত কমাবো (চিকন করবো ) রোধের পরিমান তত বাড়বে।
ধর,
দুটি পাইপ, একটি মোটা আর অপরটি চিকন। মোটা পাইপ দিয়ে কম বাধা পেয়ে সহজে পানি বেরিয়ে আসবে। আর চিকন পাইপটি দিয়ে পানি বেরুতে বেশি বাধার সম্মুক্ষিন হতে হবে।
ঠিক একই ভাবে বলা যায় (R∝1/A)। যদি আমার ক্ষেত্রফল বেড়ে যায় তবে রোধ কমে যাবে। যদি ক্ষেত্রফল কমে যায় তবে রোধ বেড়ে যাবে। অর্থাৎ আমরা যদি ক্ষেত্রফল ২গুন চিকন করে ফেলি তবে রোধ (1/2) অর্ধেক গুন বেড়ে যাবে। ক্ষেত্রফল যদি ৩ গুন চিকন করে ফেলি তখন রোধ (1/3) গুন বেড়ে যাবে।
সমানুপাতের ধর্ম: আমাদের প্রথম সমীকরনটি ছিলো (R∝L).. .. ….(1)
২য় সমীকরনটি ছিলো (R∝1/A) .. .. .. .. .(2)
R∝L.. .. ….(1)
R∝1/A.. .. .. .. .(2)
=R∝L.1/A
এইখানে যখন আমরা (L) এর সাথে(1/A) গুন দিবো তখন এটা হবে (L.1/A)
R= ρ(L/A)
অর্থাৎ এখানে সমান সমান বসানোর কারনে একটা ধ্রুবক দিতে হবে। এই ধ্রুবকটিকে আমরা রো হিসেবে চিনে থাকি। এখানে রো এর যে নামটি রয়েছে সেটি “আপেক্ষিক রোধ“ হিসেবে পরিচিত।
আপেক্ষিক রোধ:আপেক্ষিক রোধের সূত্র
R= ρ.L/A
RA = ρL
ρ = R.A/L
ρ =R.( A/L )
এখানেR রোধের একক Ω, A এর এককm^2, L এর একক m
ρ = Ω.( m^2/m)
ρ = Ω.m
আপেক্ষিক রোধের তাৎপর্যঃ
১. আপেক্ষিক রোধ কম সেটা তড়িৎ পরিবাহী।
২. তামা বৈদ্যুতিক তারে ব্যবহার হয়।
৩. নাইক্রমের তার হিটার হিসাবে ব্যবহার হয়।
৪. টাংস্টেনের তার ফিলামেন্ট হিসাবে ব্যবহার হয়।
১। আমরা জানি, প্রত্যেকটি বস্তুরই একটি স্বতন্ত্র আপেক্ষিক রোধ আছে। যে পদার্থের আপেক্ষিক রোধ বেশি সে পদার্থের কিন্তু বাধা বেশি। অর্থাৎ সেই পরিবাহিতে ইলেকট্রন প্রবাহ সহজে হতে পারে না। অর্থাৎ বাধা প্রাপ্ত হয়। সেটা সুপরিবাহি হিসেবে কাজ করে না। কিন্তু যে পরিবাহির আপেক্ষিক রোধ কম তার ভিতর বাধা কম। এখানে ইলেক্টন প্রবাহ সহজে হতে পারে। অর্থাৎ বাধা প্রাপ্ত হয় না।
২। তামার ক্ষেত্রে আমরা জানি যে তামার আপেক্ষিক রোধ অন্যান্য পদার্থের থেকে তুলনা মূলক কম রয়েছে। এই কারনে বৈদ্যুতিক তারে তামা ব্যবহার হয়। যাতে সেখানে রোধ কমে আসে।
৩। নাইক্রোসের ক্ষেত্রে এর আপেক্ষিক রোধের পরিমান অনেক বেশি। এজন্যই নাইক্রোম সাধারনত হিটার হিসাবে ব্যবহার হয়। কারন এই পরিবাহির আপেক্ষিক রোধ বেশি হওয়ায় ইলেক্ট্রনের মধ্য দিয়ে যেতে বাধা প্রাপ্ত হবে। ফলে অনুগুলোর মধ্যে ঘর্ষণ বল সৃষ্টি হবে এবং এই কারনে সেখান থেকে তাপ উৎপন্ন হবে। সুতরাং বলা যায় নাইক্রোম সুপরিবাহি নয়।
৪। টাংস্টেন সাধারনত আমরা যেসব বৈদ্যুতিক বাতি যেমন ৬০ পাওয়ার ১০০ পাওয়ারের বাল্ব ব্যবহার করি সেসমস্ত বাল্বের ভেতর দেখা যায়। এই টাংস্টেন হচ্ছে উচ্চ রোধকত্ত সম্পন্ন এবং গলনাঙ্কের কারনে এটা সহজে বৈদ্যুতিক শক্তিকে অন্য শক্তিতে যেমন আলো এবং তাপ শক্তিতে রুপান্তর করতে পারে।
লেখকঃ ওমর ছালেহীন