পদার্থের অবস্থা

Advertisement Advertisement পদার্থের অবস্থা  *ভূমিকা ( Introduction ) “গ্যাস” শব্দের উদ্ভাবক হলেন বেলজিয়ামের চিকিৎসক ভন হেলমন্ট । পদার্থের যে কয়টি ভৌত অবস্থা আছে, গ্যাস তাদের মধ্যে অন্যতম। পদার্থের প্রতিটি ভৌত অবস্থা আমাদের পরিবেশের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে…

Advertisement

Advertisement

Advertisement

state of matter

পদার্থের অবস্থা 

*ভূমিকা ( Introduction ) “গ্যাস” শব্দের উদ্ভাবক হলেন বেলজিয়ামের চিকিৎসক ভন হেলমন্ট । পদার্থের যে কয়টি ভৌত অবস্থা আছে, গ্যাস তাদের মধ্যে অন্যতম। পদার্থের প্রতিটি ভৌত অবস্থা আমাদের পরিবেশের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পদার্থের অন্য দুটো গুরুত্বপূর্ণ ভৌত অবস্থা হলো তরল ও কঠিন। তরল ও গ্যাসীয় দশা দুটো প্রবাহী কিন্তু কঠিন দশাটি প্রবাহী নয়। তবে কঠিন দশাটিও প্রবাহী হতে পারে। কোনো পদার্থের ভৌত অবস্থা স্থিতিশীল নয় বরং তাপ ও চাপে পরিবর্তনশীল।
*পদার্থের পুঞ্জিভূত অবস্থা ( States of Aggregation of Matter ) ১৯৯৫ সালে বিজ্ঞানীগণ পদার্থের পাঁচটি রূপ সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। পদার্থের সর্বশেষ আবিষ্কৃত অবস্থা হলো ‘বোস-আইনস্টাইন ঘনীভুত ‘। এ রূপটি আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞানী বোস ১৯৯৫ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। প্রধান পাঁচটি অবস্থা কঠিন, তরল, গ্যাসীয়, প্লাজমা ও বোস। আইনস্টাইন ঘনীভূত অবস্থাগুলোর প্রতিটিকে আবার দশাও বলা হয়। দশা বলতে বুঝানো হয় পদার্থের একটি ভৌত অবস্থাকে। যদি শক্তি (যেমন- তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা চাপ বৃদ্ধি ) যোগ করা হয় বা শক্তি নিয়ে নেয়া হয় (যেমন-তাপমাত্রা হ্রাস বা চাপ হ্রাস ) তাহলে সেখানে ভৌত পরিবর্তন দেখা যায়। একটি পদার্থের অবস্থা আর কিছুই নয় বরং পদার্থের অনু বা পরমাণুর ভৌত অবস্থা।
*পদার্থের ভৌত অবস্থাসমূহ ( Physical States of Matter ) কোনো পদার্থ প্রধানত তাপ ও চাপের উপর নির্ভর করে সাধারণত তিনটি ভৌত অবস্থায় থাকে। যেমন-

 (১)কঠিন;(২)তরল ও (৩)গ্যাসীয়

কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি ও আয়তন থাকে; তরল পদার্থের নির্দিষ্ট আকৃতি থাকে না, নির্দিষ্ট আয়তন থাকে। তরলকে যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের আকৃতি লাভ করে। কিন্তু গ্যাসীয় পদার্থের আকৃতি ও আয়তন কোনোটিই থাকে না। তাপের প্রভাবে একটি পদার্থ তিনটই ভৌত অবস্থায় থাকতে পারে।
*পদার্থের বিভিন্ন অবস্থা ( Different States of matter )
(ক) গ্যাসীয় ধর্ম বা বৈশিষ্ট্যঃ দূরে দূরে এবং পৃথক পৃথকভাবে অবস্থিত অণুর সমন্বয়ে গ্যাসীয় পদার্থসমূহ গঠিত। গ্যাসীয় অণুসমূহ পাত্রের মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে। গ্যাসের বৈশিষ্ট্যগুলো হলোঃ-

Advertisement

  •  সম্প্রসারণশীলতাঃ গ্যাস অণুসমূহে আন্তঃআণবিক আকর্ষণ নাই বলে এদের সম্পসারণশীলতা অসীম। এরা পাত্রের সমস্ত আয়তন জুড়ে অবস্থান করতে পারে।
  •  সংকোচনশীলতাঃ গ্যাসের অণুসমূহ নিম্ন তাপে ও উচ্চ চাপে ভ্যান্ডারওয়াল্‌স বলের কারণে সহজেই সংকুচিত হতে পারে।
  •  ব্যাপন ধর্মঃ গ্যাস অণুসমূহ দ্রুত ব্যাপিত হতে পারে।
  • চাপঃ গ্যাসের অণুসমূহ পাত্রের দেয়ালে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। তাপের প্রভাবঃ গ্যাসপূর্ণ বদ্ধ পাত্রে তাপ দিলে গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি পায়।
  • সমসত্ত্ব মিশ্রণঃ গ্যাসের অণুসমূহ যে কোনো অনুপাতে সমসত্ত্ব মিশ্রণ তৈরি করতে পারে।

  •  গ্যাসের আয়তনঃ গ্যাসের নির্দিষ্ট কোনো আয়তন নাই। যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্র পূর্ণ হয়ে থাকে।

 (খ) তরল পদার্থঃ

  •  তরল পদার্থের ভর আছে, স্থান দখল করে কিন্তু নিজস্ব কোনো আয়তন নাই।
  • এরা একে অপরের সংস্পর্শে থাকে এবং অন্যান্য তরলের মাধ্যমে ব্যাপিত হয়।
  •  তরলের অণুসমূহের মধ্যে আন্তঃআনবিক আকর্ষণ থাকে, যা তাদের একত্রে ধরে রাখে।
  •  তরল পদার্থের অণুগুলো তাদের আন্তঃআনবিক স্থানের মধ্যে দিয়ে নড়াচড়া করতে পারে।
  •  তরল অণুসমূহ উচ্চ ঘনত্ব বিশিষ্ট এবং প্রবাহী(Fluid)।
  • তরল অণুসমূহের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁকা স্থান থাকে না তবে ত্রিমাত্রিক দিকে এলোমেলো গতিতে থাকে।

 (গ) কঠিন পদার্থঃ

  • কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে।
  •  এরা দৃঢ় প্রকৃতির এবং প্রবাহিত হবার ক্ষমতা নাই।
  • এদের মধ্যে পদার্থের অন্যান্য অবস্থা থেকে আন্তঃআনবিক আকর্ষণ বেশি থাকে।
  •  তরল অণু অপেক্ষা এদের ঘনত্ব বেশি।
  •  কঠিন পদার্থ খুব ধীরে ডিফিউজ বা ব্যাপিত হতে পারে।
  • কঠিন অণুসমূহের বিন্যাস শুধু কম্পন গতিতে থাকে এবং একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকে।

 (ঘ) তরল স্ফটিকাকার অবস্থা ( Liquid Crystal States )

  •  ক্যালকুলেটর, হাতঘড়ি, কম্পিউটার মনিটর তরল কেলাসসমূহ দ্বারা তৈরি।
  • এই তরল কেলাসসমূহ রড সদৃশ অণু দ্বারা গঠিত যা একই দশায় তরল এবং কঠিন কেলাসের মধ্যবর্তী অবস্থায় সজ্জিত থাকে।
  • আণবিক সজ্জার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকার তরল কেলাস দেখা যায়।
  • এই তরল কেলাস দশায় অণুসমূহ একই দিকে সজ্জিত থাকে অনেকটা ম্যাচ বাক্সের ন্যায়।
  •  তরল অংশে অণুসমূহ এলোমেলোভাবে থাকে। নেমাটিক তরল কেলাসের আণবিক সজ্জা যা আন্তঃআণবিক বলের কারণে হয়ে থাকে তা সহজেই বিচ্যুত হতে পারে।
  • এ কারণে তরল কেলাসসমূহ পানির ন্যায় সহজেই প্রবাহিত হতে পারে এবং দুর্বল আন্তঃআণবিক আকর্ষণের কারণে নেমাটিক দশায় অণুসমূহ নতুন দিকে সজ্জিত হতে পারে।

 (ঘ) প্লাজমা অবস্থা ( Plasma States )

  •  প্লাজমাসমূহ অনেকটা গ্যাসের মতো তবে পরমাণুসমূহ ভিন্ন।
  •  প্লাজমাসমূহ মুক্ত ইলেকট্রন ও মৌলের আয়ন সমন্বয়ে গঠিত। পদার্থের এই অবস্থাটি অন্য অবস্থা থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র।
  •  প্লাজমার ক্ষেত্রে ফ্লুরোসেন্ট আলোর বাল্বগুলো নিয়মিত সাধারণ আলোর বাল্ব নয়। এখানে লম্বা নলের মধ্যে গ্যাস থাকে। নলের মধ্যে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চালনা করা হলে আলো জ্বলে।
  • এখানে বিদ্যুৎ বিশেষ শক্তি হিসেবে কাজ করে এবং গ্যাসসমূহকে চার্জিত করে। এই চার্জ অ পরমাণুর উত্তেজনা বাল্বের মধ্যে জ্বলন্ত প্লাজমা সৃষ্টি করে।
  •  প্লাজমাতে গ্যাসের সকল ধর্ম বিদ্যমান অধিকন্তু প্লাজমা একটি বৈদ্যুতিক স্রোত প্রবাহিত করে।

 (চ) বোস-আইনস্টাইন অবস্থা ( Bose- Eienstine states )

  • BEC ঘটে অতি নিম্ন তাপমাত্রায়।
  • শূন্য কেলভিন তাপমাত্রায় সকল আণবিক গতি বন্ধ হয়ে যায়।
  • যখন তাপমাত্রা নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায় তখন BEC পাওয়া যেতে পারে কিছু নির্দিষ্ট মৌলের জন্য।
  •  Cornell এবং Weiman রুবিডিয়াম নিয়ে এরূপ BEC সৃষ্টি করেছেন।

*কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থের তুলনা ( Comparison of gases, solid and liquids )

তুলনার বিষয়

কঠিন পদার্থ

তরল পদার্থ

গ্যাসীয় পদার্থ

() আকার ও আকৃতি

কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি আছে।

নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি নাই। পাত্রের আকার ও আকৃতি ধারণ করে।

নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি নাই। যে পাত্রে রাখা যায় সেই পাত্রকে পূর্ণভাবে ধারণ করে।

() আয়তন

কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আয়তন আছে।

তরল পদার্থের আয়তন নির্দিষ্ট।

আয়তন নির্দিষ্ট নয়। গ্যাস সংশ্লিষ্ট পাত্রের আয়তন দখল করে।

() সংকোচনশীলতা

খুব কম সংকুচিত হয়।

সামান্য সংকুচিত হয়।

সর্বাধিক সংকোচনশীল।

() ঘনত্ব

খুব বেশি।

কঠিন থেকে কম।

অত্যন্ত কম।

() আন্তঃআণবিক আকর্ষণ

আন্তঃআণবিক আকর্ষণ সর্বাধিক এবং অণুর স্থানান্তর গতি সর্বনিম্ন।

অণুর স্থানান্তর গতি ও আন্তঃআণবিক আকর্ষণ সমান।

আন্তঃআণবিক আকর্ষণ সর্বনিম্ন কিন্তু অণুর স্থানান্তর গতি সর্বাধিক।

*পদার্থের ভৌত অবস্থার মধ্যে আন্তঃপরিবর্তনের সম্পর্ক ( Interchange Relation Between Physical States of Matter )

physical states of matter
চিত্র: পদার্থের ভৌত অবস্থার মধ্যে আন্তঃপরিবর্তনের সম্পর্ক

পানি একটি তরল পদার্থ, একে ঠান্ডা করলে তা বরফ নামক কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। আবার তরল পানিকে উত্তপ্ত করলে তা গ্যাসে পরিণত হয়। সে গ্যাসকে জলীয়বাষ্প বলা হয়। জলীয়বাষ্পকে ঠাণ্ডা করলে আবার তরল পানিতে পরিণত হয়। এসব পরিবর্ত্ন হলো ভৌত পরিবর্তন। এতে বস্তুর আণবিক গঠনে কোনো পরিবর্তন হয় না।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *