পানামা খালের ইতিহাস

 পানামা খাল ও সুয়েজ খাল বিশ্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি কৃত্রিম জলপথ। তবে এর মধ্যে পানামা খাল সুয়েজ খাল অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত। এটি আমেরিকা মহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ ভূখণ্ডকে সংযোগকারী পানামা প্রণালীতে, জাহাজ পারাপারের…

Advertisement

 পানামা খাল ও সুয়েজ খাল বিশ্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ দুটি কৃত্রিম জলপথ। তবে এর মধ্যে পানামা খাল সুয়েজ খাল অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত। এটি আমেরিকা মহাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ ভূখণ্ডকে সংযোগকারী পানামা প্রণালীতে, জাহাজ পারাপারের জন্য তৈরি একটি কৃত্রিম খাল। পানামার ১ লক্ষ ২০ হাজার একর অনুর্বর জমির উপর দিয়ে প্রবাহিত এই পানামা খাল। উত্তর আমেরিকার উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অপর দিকের বন্দরে যেতে প্রায় ৩৫০০ মাইল দূরত্ব কমে গেছে। যেসব জাহাজ ইউরোপ, পূর্ব এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া যাতায়াত করে সেগুলো এ খালটি ব্যবহার করে।

পানামা খালের ইতিহাস

পানামা খালের ইতিহাস

পানামা খাল খনন হয় ১৯০৪ সালে ও শেষ হয় ১৯১৪ সালে কিন্তু এর ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ। স্প্যানিশ অভিযাত্রী ভাস্কো নুয়েঞ্জ ডি বালবোয়াই প্রথম ইউরোপীয়, যিনি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরের এ সম্মিলনের কথা বলেছিলেন।
পানামা খালের ইতিহাস

সে সময়ের স্প্যানিশ রাজা বালবোয়াইয়ের এ ধারণাকে উড়িয়ে দেন।তবে ১৫৩৪ সালে অপর রাজা চার্লস পঞ্চম প্রস্তাবটি যাচাইয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি তদন্ত করে জানায় একটি জাহাজ প্রবেশ করতে পারে এমন খাল ওই স্থানে খনন করা অসম্ভব। এরপর সময় কেটে যায় শতাব্দির পর শতাব্দি। পানামা খাল আর খনন করা যায়নি। আঠারো শতকের শেষের দিকে এ পথটিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের চোখ পড়ে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কঠিন হস্তক্ষেপেই তৈরি হয়েছে পানামা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথমে খালটি নিকারাগুয়া দিয়ে করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নিকারাগুয়ার রাজনৈতিক অসন্তোষ ও ফরাসি প্রকৌশলী ফিলিপ বোনাও ভারিল্লার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র এ খাল পানামা দিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে দুই সাগরকে এভাবে এক করাটা একেবারেই অসম্ভব ছিল। এর মূল কারণ পানির উচ্চতার তারতম্য। খালটি দুই সমুদ্র সমতল হতে ৮৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। ঠিক এ কারণেই পনেরো শতকে পানামা খাল তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ১৮৮১ সালে খালটি খনন শুরু করে টির কারণে আবারও ব্যর্থ হয় কাজ। এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকার এটি নিয়ে কলম্বিয়া সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করার চেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক ও সামরিক নৌজাহাজগুলো সহজে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগরে নেয়ার জন্য খাল খননের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে কলম্বিয়া সরকার। আর এ প্রত্যাখ্যানের পরই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কুটনৈতিক চালে একটি কথিত অভ্যুত্থান ঘটে এবং ১৯০৩ সালে জন্ম হয় পানামা নামের স্বাধীন রাষ্ট্রের। খাল খননে আর বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হয়নি যুক্তরাষ্ট্রের। পানামা-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকার ১৯০৪ সালে খালটি পুনরায় খনন শুরু করে। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা ব্যর্থ হয়। ভারি বর্ষণ, আর্দ্রতা ও স্থানীয় বিভিন্ন রোগ ছিল খাল খননের অন্যতম প্রতিবন্ধক। এর আগেও স্পেন খাল খনন শুরু করলে নানা কারণে বিশ হাজার শ্রমিক দুর্ঘটনা ও মশার কামড়ে হলুদ জ্বর হয়ে মারা গেলে খনন বন্ধ রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্র তার কারিগরি সক্ষমতা দিয়ে শ্রমিক মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনে। তারপরও পাঁচ হাজার ছয়শ শ্রমিক মারা যায়। তৈরি হয় সভ্যতার অনন্য মাপকাঠি পানামা যোজক। পানামা খাল সংকীর্ণ আর অগভীর হওয়ায় যে কোনো জাহাজকেই এ খাল অতিক্রম করতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হয়। তারপর ২০০৭ সালে সম্প্রসারণ করা হয় খাল। বর্তমানে একটির বদলে পাশাপাশি দুটি জাহাজ চলতে পারে।

পানামা খালের বিবরনঃ

পানামা খালের দৈর্ঘ্য ৬৫ কিমি. গভীরতা ১২ থেকে ১৫ মিটার এবং তলার প্রস্থ ৩০ থেকে ৯০ মিটার। খালটির উভয় প্রান্তে ২টি ছোট সমুদ্র সমতল ভাগ এবং তিন জোড়া গেট আছে, যেগুলো জাহাজকে সমুদ্র সমতল থেকে ৩২ মিটার (প্রায় ১০৫ ফুট) উপরে তুলে দেয় এখানে ৩২ মাইল অতি প্রশস্ত ভাগ আছে, যার মধ্যে গাট্টন লেক ও গাইলার্ডকাট নামে আট মাইল দীর্ঘ অপ্রশস্ত চ্যানেল আছে।

Advertisement
পানামা খালের ইতিহাস

ক্যানেলটির গেট নিয়ন্ত্রণ করা হয় গুটান লেক এবং ম্যাডেন লেক থেকে প্রবাহিত জল শক্তির সাহায্যে। এ খাল প্রশান্ত মহাসাগরের বাল বোয়া থেকে শুরু করে মিরাফ্লোর্স ও গাট্টন হ্রদ হয়ে ক্যারিবিয়ান উপসাগরের গাট্টন গেটে গিয়ে পড়ে৷ গাট্টন হ্রদের পানি সমুদ্রের পানি হতে প্রায় ২৬ মিটার উঁচু৷ তাই শক্তিশালী বৈদ্যুতিক যন্ত্র দ্বারা জাহাজগুলোকে পাশে ১২টি পানি নিয়ন্ত্রণকারী গেট ও শক্তিশালী বৈদ্যুতিক যন্ত্র দ্বারা অত্যন্ত ধীরগতিতে উঠানো ও নামানো হয়৷

পানামা খালের ইতিহাস
Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *