কুটির শিল্প কি ও কুটির শিল্পের উদাহরণ
জানুন কুটির শিল্প কাকে বলে এবং কুটির শিল্পে বিনিয়োগ, এ শিল্পের উদাহরণ ও বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে।
আপনি কি জানেন কুটির শিল্প কাকে বলে? অনেকেই আমরা এসম্পর্কে শুনলেও বিস্তারিত জানি না। এখানে আপনি জানতে পারবেন কুটির শিল্প কাকে বলে, বিনিয়োগের পরিমাণ এবং কুটির শিল্পের উদাহরণ সম্পর্কে।
আসুন কুটির শিল্প নিয়ে বিছু তথ্য।
কুটির শিল্প কাকে বলে
কুটির শিল্প কাকে বলে: যে সমস্ত দ্রব্যসামগ্রী কুটিরের মধ্যে অর্থাৎ কোনো ছোটখাটো ঘর অথবা ছোটখাটো দোকানের মধ্যে উৎপাদন হয়ে থাকে তাকেই কুটির শিল্প বলা হয়ে থাকে। পারিবারিক সদস্যদের শ্রম দ্বারা এবং পারিবারিক পরিবেশে কোনরকমের বিদ্যুৎ ও ভারী যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই হাতের সাহায্যে এসব দ্রব্য দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করা হয়।
বিনিয়োগের পরিমাণ – কুটির শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ অনুর্দ্ধ ৫ লাখ টাকা।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই কমবেশি কুটির শিল্পের অস্থিত্ব রয়েছে। উন্নত দেশে এগুলো অবসরের শখ এবং ধনীরা ফ্যাশন হিসেবে এগুলো ব্যবহার করে। আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কুটিরশিল্প শ্রমিকরা এটাকে তাদের জীবিকার উৎস হিসেবে মনে করে।
কুটির শিল্পের বৈশিষ্ঠ্য
- পরিবার কেন্দ্রিক – এটি মুলত পরিবারে সদস্যদের নিয়েই পরিচালিত হয়ে থাকে।
- স্বল্প মূলধন – কুটির শিল্পে খুব বেশি মূলধনের প্রয়োজন হয় না। এখানে উদ্যোক্তাই মূল কারিগর হয়ে থাকে।
- অবস্থান – কুটির শিল্প যেখানে সেখানে স্থাপন করা যায়। সাধারণত উদ্যোক্তা নিজ বাড়িতেই এটা পরিচালনা করে থাকেন।
- আয়তন – কুটির শিল্পের অন্যতম বৈশিষ্ঠ এর আয়তন খুব ছোট এবং সাধারণত পারিবারিক আঙ্গিনায় হয়ে থাকে।
- কাঁচামাল – কুটির শিল্পে স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করেই পন্য উৎপাদন করা হয়। এর ফলে আমাদের দেশের কাঁচামাল ও প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
আরও পড়ুন- ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে পার্থক্য
কুটির শিল্পের উদাহরণ
- মৃৎশিল্প – মাটির জিনিসপত্র তৈরি
- রেশম শিল্প
- তাঁত শিল্প
- কাঠ শিল্প – কাঠের মিস্ত্রির আসবাবপত্র তৈরি
- কামার কাঁচি, কাস্তে, হাতুড়ি বানায়
- বাঁশ-বেত শিল্প – বাঁশ ও বেতের ঝড়া বানানো
- ঘরে বসে জামাকাপড় তৈরি
- কাগজের ঠোঙ্গা বানানো
- ঘরে বসে পুতুল বানানো
বাংলাদেশের কুটির শিল্পের তালিকা
ক্রমিক | কুটির শিল্প |
---|---|
1 | মৃৎশিল্প |
2 | কামার শিল্প |
3 | কাঠ শিল্প |
4 | স্বর্ণশিল্প |
5 | রেশম শিল্প |
6 | তাঁত শিল্প |
7 | বাঁশ-বেত শিল্প |
8 | সূচিশিল্প |
9 | শঙ্খশিল্প |
10 | পাট শিল্প |
11 | রন্ধনশিল্প |
বাংলাদেশের চারটি কুটির শিল্পের নাম
- তাঁত শিল্প: তাঁত শিল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং জনপ্রিয় কুটির শিল্প। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁত শিল্পে তৈরি পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, সালোয়ার-কামিজ, তোয়ালে, বিছানার চাদর, ইত্যাদি।
- বাঁশ-বেত শিল্প: বাঁশ-বেত শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কুটির শিল্প। এটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাঁশ-বেত শিল্পে তৈরি পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে চেয়ার, টেবিল, সোফা, খাট, কুশন, মাছ ধরার জাল, চালুনি, ইত্যাদি।
- মৃৎশিল্প: মৃৎশিল্প বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় কুটির শিল্প। এটি বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মৃৎশিল্পে তৈরি পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে পাত্র, হাঁড়ি, কলস, তৈজসপত্র, টেবিলওয়্যার, ইত্যাদি।
- কাঠ শিল্প: কাঠ শিল্প বাংলাদেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কুটির শিল্প। এটি বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে কাঠের প্রাপ্যতা থাকার কারণে বিকাশ লাভ করেছে। কাঠ শিল্পে তৈরি পণ্যগুলির মধ্যে রয়েছে আসবাবপত্র, জানালা, দরজা, ফার্নিচার, খেলনা, ইত্যাদি।
কুটির শিল্পের গুরুত্ব
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে বেশ কয়েক ধরনের কুটির শিল্প রয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প, কাঠ শিল্প ইত্যাদি।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের গুরুত্ব হচ্ছে;
- দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো – সারাদেশে শতশত বছর ধরে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মিটিয়ে আসছে।
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি – ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দারিদ্র্য ও বেকারত্ব কমাতে এ শিল্প ভূমিকা রাখছে।
- বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন – কোনো কোনো পণ্য বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
- সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ – ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত।ৎ
FAQs
পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পারিবারিক পরিবেশে গড়ে ওঠা শিল্পই কুটির শিল্প।
কুটির শিল্পের শ্রমিক সংখ্যা অনধিক ১৫ জন হতে পারে। কুটির শিল্পে মূলত পারিবারিক সদস্যরাই শ্রম দিয়ে থাকে এবং এখানে সদস্য সংখ্যা বাধ্যতামূলকভাবে প্রযোজ্য নয়।
বাংলাদেশের তিনটি কুটির শিল্প হচ্ছে ১) তাঁত শিল্প, ২) রেশম শিল্প ও ৩) মৃৎ শিল্প।
কুটির শিল্প প্রধানত পরিবারভিত্তিক এবং উদ্যোক্তা নিজেই এর কারিগর। পারিবারিক অন্যান্য কাজ সম্পাদন করার পর অবসর সময়ে পণ্য উৎপাদন করে। তাই কুটির শিল্পকে খণ্ডকালীন উৎপাদন ইউনিট বলা হয়।
বিভিন্ন ধরণের কুটির শিল্প রয়েছে। কয়েকটি কুটির শিল্পের নাম হচ্ছে, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, স্বর্ণশিল্প, শঙ্খশিল্প, রেশমশিল্প, রন্ধনশিল্প, সূচিশিল্প, শীতলপাটি, পাটের ব্যাগ, হাত পাখা, মাছ ধরার জাল, কাঠের আসবাবপত্র তৈরি ইত্যাদি।