ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার যোগ্যতা ও কোথায় পড়বেন
ফ্যাশন ডিজাইন পড়তে আগ্রহী? জেনে নিন ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার যোগ্যতা কি, কোথায় ভর্তি হবেন এবং ফ্যাশন ডিজাইনের ভবিষ্যত সম্ভাবনাসমূহ।
বর্তমান বিশ্বে ফ্যাশন ডিজাইন একটি জনপ্রিয় পেশা এবং ফ্যাশন ডিজাইনারের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। আপনি যদি এই ফিল্ডে নিজের ক্যারিয়ার গঠন করতে চান, এটি একটি ভাল Decision হতে পারে।
ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করার আগে আপনাকে এ বিষয়ের ভবিষ্যত সুযোগ সুবিধা, ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার যোগ্যতা এবং কোথায় পড়তে পারবেন এগুলো জেনে নিতে হবে।
তাই, আপনার সুবিধার্থে এসব বিষয় নিয়ে আমাদের আজকের ব্লগ। এখানে ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার জন্য কি কি শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কারিগরী দক্ষতা থাকতে হবে এবং কোথায় ভর্তি হবেন এসব বিষয়ে বিস্তারিত।
আসুন প্রথমেই জেনে নিই, ফ্যাশন ডিজাইন কি।
ফ্যাশন ডিজাইন কি
ফ্যাশন ডিজাইন হলো পোশাক পরিচ্ছন্ন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক যেমন ব্যাগ, গহনা, চাদর ইত্যাদির পাশাপাশি জুতা পর্যন্ত তৈরির শিল্প বা প্রক্রিয়া যা আকর্ষণীয় ও নান্দনিকতার মধ্যে দিয়ে সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে।
ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাদের সৃজনশীলতা, শৈল্পিক দক্ষতা এবং জ্ঞানের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফ্যাশন ডিজাইন করে থাকে।
ফ্যাশন ডিজাইন বিভিন্ন রকম হতে পারে যেমন রেডি টু ওয়্যার, খেলাধুলার পোশাক, ইভিনিং ওয়্যার, ক্যাজুয়াল ওয়্যার, বিভিন্ন অ্যাক্সেসরিজ বা আনুষঙ্গিক ডিজাইনিং ইত্যাদি।
বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইন একটি গতিশীল এবং প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র যার জন্য শৈল্পিক দৃষ্টি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সংস্কৃতি চেতনার সমন্বয় প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার যোগ্যতা ও কোথায় পড়বেন
ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার যোগ্যতা
ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার জন্য আপনাত যেসকল দক্ষতা এবং যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলো নিয়ে আমরা এখন আলোচনা করব।
১. শিক্ষাগত যোগ্যতা
ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার জন্য মোটামুটি ভালো গ্রেড বা পয়েন্ট প্রয়োজন হয়। ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার জন্য নিম্মোক্ত যোগ্যতা থাকতে হবে:
- Undergraduate Program: এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমান উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ৫.০০ থাকতে হবে। এছাড়া আলাদাভাবে ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ থাকতে হবে।
- Graduate Program: গ্রাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি থাকতে হবে এবং সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে নূন্যতম ২.৫০ থাকতে হবে।
- Textile Engineering/ MSC Fashion Design: স্নাতক ডিগ্রী থাকতে হবে।
আরও পড়ুন: সিভির যে সাধারণ ভুলগুলো আমরা সবাই করছি
২. ক্রিয়েটিভ এবং আর্টিস্টিক দক্ষতা
ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার জন্য অবশ্যই ক্রিয়েটিভ মানসিকতা এবং আর্টিস্টিক দক্ষতা থাকতে হবে যার ফলে চমৎকার এবং অসাধারণ ডিজাইন তৈরি করার সহজ হবে।
আপনার ক্রিয়েটিভ এবং আর্টিস্টিক চিন্তা চেতনা সৃজনশীলতার মাধ্যমে আপনার ডিজাইনের তুলে ধরার দক্ষতা থাকতে হবে।
ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আপনি যদি ডিজাইনে সৃজনশীল, বৈচিত্র্যময়, নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে না পারেন তাহলে যেকোনো বস্তুর ডিজাইনে নতুনত্ব আনতে পারবেন না।
তাই যেকোনো ধরনের ডিজাইনের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভ এবং আর্টিস্টিক দক্ষতা ফুটিয়ে তোলার জন্য আপনাকে সৃজনশীল এবং চিন্তাশীল হতে হবে।
৩. স্কেচিং কৌশল
ফ্যাশন ডিজাইনের ক্ষেত্রে সাধারণত স্কেচিং কৌশল ও ছবি আঁকার দক্ষতা না থাকলে এটিকে পেশা বা ক্যারিয়ার হিসেবে নির্বাচন করা উচিত নয়।
ফ্যাশন ডিজাইনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো স্কেচিং করা বা সুন্দর করে ছবি আঁকা।
এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই Adobe Illustrator, Adobe Photoshop ইত্যাদি গ্রাফিক্স ডিজাইনে ব্যবহৃত টুলগুলো সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে হবে এবং এই টুলগুলো ব্যবহার করার দক্ষতা থাকতে হবে।
৪. কারিগরি দক্ষতা
ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার জন্য অবশ্যই আপনার কারিগরি দক্ষতা সম্পর্কে জানা এবং দক্ষতা থাকা অত্যাবশ্যক।
এই কারিগরি দক্ষতা মূলত গার্মেন্টস নির্মাণ, সেলাই, প্যাটার্ন তৈরি, ড্র্যাপিং, টেক্সটাইল জ্ঞান ইত্যাদি সম্পর্কে হয়ে থাকে।
আপনার ডিজাইনে নতুনত্ব, সৃজনশীলতা, বৈচিত্রতা ইত্যাদি ফুটিয়ে তোলার জন্য এই ধরনের কারিগরি দক্ষতা সম্পর্কে জ্ঞান থাকা এবং কারিগরি দক্ষতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. প্রযুক্তিগত দক্ষতা
বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার জন্য ডিজাইন তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রযুক্তি, কম্পিউটার ইত্যাদি দক্ষতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকাল ফ্যাশন ডিজাইনার ডিজাইন তৈরি করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের এআই টুল ব্যবহার করে থাকে যা নতুন ধরনের বৈচিত্র্যময় ডিজাইন তৈরি করতে সাহায্য করে।
ফ্যাশন ডিজাইনকে ক্যারিয়ার হিসেবে বাছাই করলে আপনাকে অবশ্যই ডিজাইন তৈরি করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
৬. বেসিক কৌশল জানা
ফ্যাশন ডিজাইনের কথাটা শুনলেই প্রথমে আমাদের মাথায় পোশাক সম্পর্কিত ব্যাপার গুলো চলে আসে এবং এই ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার পূর্বশর্ত হলো সেলাই এবং নকশা করার দক্ষতা থাকা।
পোশাক পরিচ্ছদ, জুতা, ব্যাগ ইত্যাদির উপর বিভিন্ন নতুন নতুন নকশা দিয়ে কারুকার্য করা, সেলাই জানা, সঠিক রং প্রয়োগ করা ইত্যাদি বেশি কৌশলগুলো অবশ্যই জানতে হবে।
সাধারণত ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার জন্য উপরোক্ত যোগ্যতা গুলো থাকতে হবে এবং দক্ষতা গুলো অবশ্যই অর্জন করতে হবে।
এই যোগ্যতা এবং দক্ষতা গুলো আয়ত্ত করতে পারলেই একে পেশা এবং ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়ে একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনের হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবেন।
ফ্যাশন ডিজাইনের কাজের ধরন
ফ্যাশন ডিজাইনের ক্ষেত্রে অ্যাক্সেসরি ডিজাইন, কার্ডিগ্যান ডিজাইন, ড্র্যাপিং ডিজাইন, টেক্সটাইল ডিজাইন ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন তৈরি করার কাজ থাকতে পারে।
ফ্যাশন ডিজাইনে ডিজাইন তৈরি করার বিভিন্ন ধরনের কাজগুলো হলো –
- বিভিন্ন বস্তুর ফ্যাশন বা ডিজাইনের কালেকশন ডিজাইন তৈরি করা।
- বিভিন্ন ফ্যাশন এক্সেসরিজ যেমন জুতা, জুয়েলারি, স্কার্ফ, হ্যান্ড ব্যাগ ইত্যাদির ডিজাইন তৈরি বা এক্সেসরিজ ডিজাইন।
- কার্ডিগান, জ্যাকেট, পোশাক, স্বেটার ইত্যাদির কার্ডিগান ডিজাইন তৈরি করা।
- আধুনিক লুক তৈরি করার জন্য ড্র্যাপিং ডিজাইন তৈরি করা।
- বিভিন্ন বস্তুর স্পেসিফিক পার্ট বা কাস্টমাইজ ডিজাইন করার ক্ষেত্রে কানাড়ি ডিজাইন তৈরি করা।
- পোশাক পরিচ্ছদ, বস্ত্র ইত্যাদির ক্ষেত্রে টেক্সটাইল ডিজাইন তৈরি করা।
- বিভিন্ন ধরনের ডিজাইনের উপযুক্ত রং প্রয়োগ করা বা কালার কম্বিনেশন ঠিক রেখে কালার ডিজাইন করা।
এগুলো হলো ফ্যাশন ডিজাইনের কিছু কাজের ধরন তবে উপরোক্ত কাজ গুলো ছাড়াও ফ্যাশন ডিজাইন পেশার ক্ষেত্রে আরো বিভিন্ন ধরনের কাজ লক্ষ্য করা যায়।
ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার খরচ
আপনি যদি ফ্যাশন ডিজাইনকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান অথবা ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ালেখা করতে চান তাহলে আপনি যেকোনো সরকারী বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়তে পারবেন।
বিভিন্ন ধরনের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আপনার সর্বনিম্ন ২ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
আবার আপনি যদি বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলো থেকে ডিজাইন নিয়ে পড়তে চান তাহলে আপনার সর্বনিম্ন ৩ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ফ্যাশন ডিজাইন পড়ার খরচ কম বেশি হতে পারে।
ফ্যাশন ডিজাইন কোথায় পড়বেন
ফ্যাশন ডিজাইন শিখার জন্য অবশ্যই আপনাকে ৪ বছর মেয়াদী অনার্স বা ডিপ্লোমা কোর্স করতে হবে এবং অবশ্যই ভালো গ্রেড পয়েন্ট থাকতে হবে।
বাংলাদেশে সরকারি বেসরকারি এমন অনেক ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ফ্যাশন ডিজাইনে আগ্রহীদের ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করিয়ে থাকে।
ফ্যাশন ডিজাইন কোর্স বা প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে ফ্যাশন ডিজাইনিং কোর্স করানো হয় এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলো:
ক্র. নং | প্রতিষ্ঠানের নাম | ঠিকানা |
---|---|---|
1 | শহীদ এস এ মেমোরিয়াল টেক্সটাইল ফ্যাশন ডিজাইন এবং টেক্সটাইল কলেজ | ঠিকানা: বাসা নং #২০, রোড নং #১৩, সেক্টর #১০, উত্তরা মডেল টাউন (কামারপাড়া বাস স্টপের কাছে), ঢাকা-১২৩০। মোবাইল : +8801949150150 ওয়েবসাইট : www.samftc.edu.bd ইমেইল : [email protected] |
2 | ঢাকা ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি | ঠিকানা: প্লট #৯, ব্লক # ক, বিভাগ #৬, রোড নং #১, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ মোবাইল: 0258052309 ওয়েবসাইট: www.dift.edu.bd ইমেইল: [email protected] |
3 | বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় | ঠিকানা: ৯২, শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ এভিনিউ, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, ঢাকা-১২০৮ মোবাইল: 0258151788 ওয়েবসাইট: www.butex.edu.bd ইমেইল: [email protected] |
4 | বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশন এন্ড টেকনোলজি | ঠিকানা: বাসা নং # 3/GA, রোড নং #১, ঢাকা-১২০৭। মোবাইল : +8801629171717 ওয়েবসাইট : www.bifdt.com ইমেইল : [email protected] |
5 | বিজিএমইএ ইনস্টিটিউট অফ ফ্যাশনাল টেকনোলজি | ঠিকানা: নিশতনগর, তুরাগ, ঢাকা- ১২৩০। মোবাইল : 9606808080 ওয়েবসাইট : www.buft.edu.bd ইমেইল : [email protected] |
6 | ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডিজাইন | ঠিকানা: বাসা নং #১১৮, রোড নং #9A, ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৯। মোবাইল : +8801921668999 ওয়েবসাইট : www.nid.edu.bd |
7 | ড্রিমজোন বাংলাদেশ | ঠিকানা: প্লট #৩০, সোনারগাঁও জনপথ রোড, ঢাকা – ১২৩০। মোবাইল : +8801401343446 ওয়েবসাইট : www.dreamzonebd.com |
শেষ কথা
বর্তমানে ফ্যাশন ডিজাইন একটি চাহিদাসম্পন্ন পেশা এবং ক্যারিয়ার যার জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলছে। ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়ার সকল দক্ষতা এবং যোগ্যতা আয়ত্ত করে এবং সকল নিয়ম কানুন সঠিকভাবে অনুসরণ করে আপনি হতে পারবেন একজন সফল ফ্যাশন ডিজাইনার।