কীর্তিমানের মৃত্যু নেই বা মানুষ বাঁচে তার কর্মে বয়সে নয় [ভাবসম্প্রসারণ]

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই বা মানুষ বাঁচে তার কর্মে বয়সে নয় নিয়ে কয়েকটি ভাবসম্প্রসারণ

“কীর্তিমানের মৃত্যু নেই” এই কথাটির প্রায় সমার্থক আরেকটি বাক্য হলো, “মানুষ বাঁচে তার কর্মে বয়সে নয়।” তাই এই দুটি বাক্যের ভাব সম্প্রসারণ লিখতে একইভাবেই লিখা যাবে।

ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য এর কয়েকটি ভাবসম্প্রসারণ উদাহরণ নিচে দেয়া হলো। আশাকরি আপনাদের কাজে লাগবে। ভাবসম্প্রসারণ লিখার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনারা ৩টি প্যারা করবেন, মূলভাব, সম্প্রসারিত ভাব ও মন্তব্য। যদিও আমি সম্প্রসারিত ভাবে আপনাদের বোঝার সুবিধার্থে অনেকগুলো প্যারাতে ভাগ করেছি, আপনারা এক সাথে লিখতে পারেন।

কীর্তিমানের মৃত্যু নেই – ভাবসম্প্রসারণ Class 6/7 and 8

মূলভাব

পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীরই মৃত্য অবধারিত। যে জন্ম নিয়েছে তাকে অবশ্যই একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। তবে কিছু মানুষ মারা যাওয়ার পরও এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকেন তাদের কর্মের দ্বারা।

সম্প্রসারিত ভাব

প্রতিটি মানুষকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হয়। এ নশ্বর পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকতে পারবে না। একদিন আগে বা পরে সবাইকেই এই পৃথীবির মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। সাধারণত মানুষ মারা গেলে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী কয়েক মাস বা সর্বোচ্চ কয়েক বছর মনে রাখবে। তবে কিছু মানুষ মারা যাওয়ার পর তার শরীরের অবসান হয় কিন্তু তাঁর মহৎ কাজ, অম্মান কীর্তি তাঁকে চিরকাল বাঁচিয়ে রাখে।

মৃত্যু অবধারিত জেনেও এ সংক্ষিপ্ত জীবনে কেউ কেউ মানবকল্যাণে এমন কিছু কীর্তি রেখে যান, মৃত্যুর পরও মানুষের হৃদয়ে চিরকাল অমর হয়ে থাকেন। কীর্তিমান মানুষের মৃত্যুর শত শত বছর পরেও মানুষ তাকে স্মরণ করে।

বায়ান্নর মহান ভাষা-আন্দোলনে শহিদ সালাম, বরকত, রফিক, শফিক এবং মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদ বাংলার মানুষের হৃদয়ে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে। তাদের অম্লান কীর্তি বাঙালি চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।

তেমনি পৃথিবীর ইতিহাসে যারা জীবদ্দশায় মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে গেছেন, তাঁরা মানুষের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য

এ নশ্বর পৃথিবীতে শুধুমাত্র মানুষের কর্ম অবিনশ্বর। দেহের মৃত্যু হলেও কর্মের মৃত্যু নেই। মৃত্যুর শত শত বছর পরেও একজন কীর্তিমানের অমর অবদানের কথা মানুষ স্মরণ করবে। সুতরাং আমরা নির্দ্বিধায় আমরা বলতে পারি, কীর্তিমানের মৃত্যু নেই।

মানুষ বাঁচে তার কর্মে বয়সে নয়

মূলভাব

কাজই মানুষকে পৃথিবীর বুকে চিরকাল কীর্তিমান এবং চিরস্মরণীয় হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। মহৎ মানুষ পৃথিবী থেকে শারীরিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও রয়ে যায় তার মহৎ কর্ম। তার এই মহৎ কর্মই সাক্ষ্য দেয় মানুষের কীর্তি ও গৌরবের।

সম্প্রসারিত ভাব

মানুষের জীবনকে বয়সের সীমারেখা দিয়ে মাপা যায় না। একজনা মানুষ শতবছর বেঁচেও যদি জীবনে কোনাে ভালাে কাজ না করে তবে সে জীবন অর্থহীন। এ অর্থহীন জীবন নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার পর খুব বেশিদিন তাকে মানুষ মনে রাখবে না।

কিন্তু যে মানুষ মাত্র ২১ বছর বেঁচেও তার ছােট্ট জীবনকে দেশ, জাতি ও সমগ্র পৃথিবীর কল্যাণে কাজে লাগায় তার জীবন হয় সার্থক। তার মহৎ কর্মের জন্য তিনি মানুষের কাছে আজীবন স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকেন। তাকে মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

এ অবদান বা গৌরব বয়সের সীমারেখা দ্বারা পরিমাপ করা যায় না। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বয়স নয় বরং কর্মের গুণেই মানুষের মাঝে অমরত্ব লাভ করেছেন।

কাজী নজরুল ইসলাম অনেক বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। কিন্তু তার ৪০ বছর বয়সের পর বাকশক্তি ছিল না। কিন্তু তিনি তাঁর কর্মময় জীবনে যে সময়টুকু মহৎ সাহিত্য সাধনায় ব্যয় করেছেন, সেই মহৎ কাজের জন্যে তিনি গৌরবান্বিত হয়েছেন।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুল শুকতারার মতাে উজ্জ্বল হয়ে আছেন তার অসাধারণ সাহিত্যকর্মের জন্যে।

অপরদিকে, কবি সুকান্ত মাত্র ২১ বছর বয়সে মারা যান। এত অল্পসময়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে যে অবদান রেখে গেছেন তাতে কখনাে তার মৃত্যু হবে না। তিনি চিরস্মরণীয়।

এভাবে অনেক জ্ঞানী-গুণী দার্শনিক, কবি, বৈজ্ঞানিক অসংখ্য অবদান রেখে গেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে। তাই তারা পৃথিবী থেকে শারীরিকভাবে বিদায় নিলেও পৃথিবীর মানুষের মাঝে তাঁদের মহৎ কর্মের জন্যে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য

মানুষ বেশি বয়স পর্যন্ত বাঁচলেও তার এই দীর্ঘ জীবনের কোন মূল্য নেই। অপরদিকে, কেউ খুব সংক্ষিপ্ত জীবনের সময়কে কাজে লাগিয়ে যদি মানুষের কল্যাণে কোন কীর্তি রেখে যায়, তারই মূল্য রয়েছে। তাঁর রেখে যাওয়া কীর্তি মানুষকে অনুপ্রেরণা দেয় এবং তাঁকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে চিরকাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *