মালালা দিবস কেন পালিত হয় | মালালা ইউসুফজাইয়ের ইতিহাস
জানুন কেন ও কবে মালালা দিবস পালিত হয়। মালালা ইউসুফজাইয়ের ইতিহাস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
নারী শিক্ষার অগ্রনায়িকা মালালা ইউসুফজাই পাকিস্তানের মিংগোরায় জন্মগ্রহণ করেন ১২ জুলাই, ১৯৯৭ সালে। মালালা ইউসুফজাই ২০০৮ সাল থেকে শিক্ষায় নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে লড়াই করে যাচ্ছেন নিজ গতিতে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল শান্তি পুরষ্কার গ্রহণের পর বিশ্বব্যাপী বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরষ্কার জয়ী হিসেবে আলোচিত হন মালালা।
মালালা দিবস কখন পালিত হয়
১২ জুলাই, মালালা দিবস পালিত হয়। তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ১২ জুলাই ‘বিশ্ব মালালা দিবস’ পালন করা হয়। তাছাড়া এ দিনেই জাতিসংঘে নারী শিক্ষা নিয়ে বক্তৃতা দেন মালালা।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে নোবেল শান্তি পুরষ্কার গ্রহণের পর বিশ্বব্যাপী বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরষ্কার জয়ী হিসেবে আলোচিত হন মালালা।
মালালা নামের অর্থ
মালালা নামের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “দুঃখে অভিভূত”। দক্ষিণ আফগানিস্তানের বিখ্যাত মহিলা পাশতু কবি ও যোদ্ধা মালালাই-এ-ম্যায়ওয়ান্দের নামানুসারে তার নামকরণ করা হয় মালালা।
মালালা ইউসুফজাইয়ের ইতিহাস
২০০৭ সালে তালেবানরা পাকিস্তানের মিংগোরা শহরটি দখল করে নেয় এবং তারা সেখানে মেয়েদের স্কুলে পড়া নিষিদ্ধ করে দেয়।
কিন্তু পিছনে ফিরে যাননি মালালা, নিজে লড়েছেন তালেবানদের বিপক্ষে। তিনি প্রচণ্ড সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে মালালা নারী শিক্ষার স্বপক্ষে রুখে দাঁড়িয়েছেন।
২০০৯ সালে, মালালা একটি ব্লগ শুরু করেন। ব্লগে তিনি তালেবানদের অধীনে জীবন কাটানোর দুঃসহ যন্ত্রণা ও আক্ষেপ সম্পর্কে লিখেছিলেন। তিনি স্কুলে যাওয়ার ইচ্ছা সম্পর্কেও লিখেছিলেন। ৩ বছর ধরে, মালালার বাবাও মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকারের পক্ষে ছিলেন।
এরপর ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর সকালে তালেবান বন্দুকধারীরা মালালা ইউসুফজাইয়ের উপর হামলা করে। মরতে মরতেও বেঁচে যান মালালা।
তার মাথায় গুলি লাগে। এসময় তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর। একটি মিলিটারি হাসপাতালে ৪ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ডাক্তাররা তাকে ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন। একাধিক অপারেশন এবং কয়েক মাস টানা চিকিৎসরার পর মালালা সুস্থ হয়ে উঠেন।
এরপর মালালা বার্মিংহামের স্কুলে পড়া শুরু করেন। মালালা তার ১৬তম জন্মদিনে, নিউ ইয়র্কে ভ্রমণ করেন এবং জাতিসংঘে বক্তৃতা প্রদান করেন।
২০১৩ সালে, টাইম ম্যাগাজিন মালালাকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী নারী হিসেবে ঘোষণা করে।
এরপর থেকে তিনি বিশ্বজুড়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন শোগুলোতে নিয়মিত সাক্ষাৎকার দিতে থাকেন মালালা।
এতো অল্প বয়সেই নারী শিক্ষার জন্য লড়াই করার অভিজ্ঞতা এবং নিজ জন্মভূমি ছাড়ার তীব্র কষ্টের কথা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন মালালা।
এক বছর পরই, মালালাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়। এই মর্যাদাপূর্ণ সম্মানের পাশাপাশি মালালা জাতিসংঘের মানবাধিকার পুরস্কার এবং দ্য লিবার্টি মেডেল পেয়েছেন।
২০১৭ সালে, মালালা অক্সফোর্ডে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি বর্তমানে বার্মিংহামে থাকেন এবং নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিক্ষার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
মালালা ইউসুফজাই বার্মিংহামে একটি ‘মালালা ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা যেটি অল্প বয়সী মেয়েদেরকে স্কুলে যেতে সহায়তা করে।
মালালা একটি বই প্রকাশ করেছেন যার নাম ‘আমি মালালা’। তার বইটি আন্তর্জাতিকভাবে বেস্ট সেলারের তালিকাভুক্ত হয়েছে।
মালালা ইউসুফজাই বর্তমানে কোন দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন
সাম্প্রতি মালালা কানাডার সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়েছেন। কানাডার হাউস অব কমন্সে সম্বোধন করা সবচেয়ে কম বয়সী ব্যক্তি তিনি।
২০১৩ সালে অস্কারের জন্য মনোনিত হয় মালালার ডকুমেন্টারি ‘হি নেমড মি মালালা’।
মালালা ইউসুফজাই এর উক্তি
জাতিসংঘের ভাষণকালে তিনি বলেন,
মালালা দিবস শুধু আমার দিন নয়। আজ প্রতিটি নারী, প্রতিটি পুরুষ এবং প্রতিটি মেয়ে; যারা তাদের অধিকারের জন্য আওয়াজ তুলেছে, তাদের দিন। -মালালা ইউসুফজাই
১২ জুলাই মালালা ইউসুফজাইয়ের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এর কারণ, দিনটি কেবল তার জন্মদিনই নয় বরং ২০১৩ সালের এই দিনে তিনি জাতিসংঘে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ বাড়ানোর আহবান জানান।
তাই জাতিসংঘ ১২ জুলাইকে মালালা দিবস হিসেবে ঘোষনা করে।
FAQs
২০১৪ সালে মাত্র ১৭ বছরে মালালা ইউসুফজাই বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
শিশুদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে ও শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ের জন্য মালালাকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য, মালালা ইউসুফজাইয়ের সাথে ভারতীয় সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থীকে শান্তিতে এই নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
১২ জুলাই, মালালা ইউসুফজাইয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ‘বিশ্ব মালালা দিবস’ পালন করা হয়।