যৌথ মূলধনী কোম্পানির অর্থায়নের কার্যাবলি (Functions of Finance)
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে যেমন- ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ক্রয় বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, হিসাব বিভাগ ও অর্থ বিভাগ ইত্যাদি। এসব বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো অর্থ বিভাগ। প্রতিটি বিভাগের…
একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামো বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে যেমন- ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ক্রয় বিভাগ, বিক্রয় বিভাগ, হিসাব বিভাগ ও অর্থ বিভাগ ইত্যাদি। এসব বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হলো অর্থ বিভাগ। প্রতিটি বিভাগের সমন্বয় করে অর্থ বিভাগ বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পাদন করে।
অর্থ বিভাগের সমস্ত কার্যাবলি অর্থায়নের কার্যাবলি। নিচে সংক্ষেপে অর্থায়নের কার্যাবলীগুলো আলোচনা করা হল।
অর্থায়নের কার্যাবলিসমূহ
- তহবিল সংগ্রহ
- মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত
- স্বল্পমেয়াদী বা তরল সম্পদ ব্যবস্থাপনা
- তহবিল ও লভ্যাংশ বন্টন
তহবিল সংগ্রহ
অর্থায়ন কার্যাবলির অন্যতম কাজ হলো কম খরচে অর্থের সম্ভাব্য উৎসসমুহ চিহ্নিত করে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করা।
কোন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের কী পরিমাণ নিজস্ব মূলধন (Equity) এবং কী পরিমাণ ঋণ মূলধন (Debt Capital) এর মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে তা নির্ধারণ করে মূলধন কাঠামো প্রস্তুত করা হয়।
বিভিন্ন মূলধন কাঠামোর মধ্যে কাম্য মূলধন কাঠামো বা যে মূলধন কাঠামোর ব্যয় সবচেয়ে কম তা হতে মূলধন সংগ্রহ করা অর্থায়নের প্রধান কাজ।
মূলধন বাজেটিং সিদ্ধান্ত
কোন প্রকল্প চালু করার আগে প্রকল্পের জন্য কি পরিমাণ মূলধন প্রয়োজন, প্রকল্পের কার্যকাল কত বছর এবং ঐ প্রকল্প থেকে ভবিষ্যতে প্রত্যাশিত আয় ও আয়ের অনিশ্চয়তা প্রভৃতি বিষয় বিবেচনা ও মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। প্রতিষ্ঠানের এমন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার প্রক্রিয়াকে মূলধন বাজেটিং বলা হয়।
কোম্পানির দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের পূর্বে প্রকল্পের মূলধন বাজেটিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক স্বম্ভাব্যতা যাচাই করে নেওয়া অর্থায়নের অন্যতম কাজ।
স্বল্পমেয়াদী বা তরল সম্পদ ব্যবস্থাপনা
স্বল্পমেয়াদি বা সম্পদ ব্যবস্থাপনা বলতে প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ, মজুদপন্য, দেনাদার ও প্রাপ্য বিল ইত্যাদির ব্যবস্থাপনাকে বুঝায়।
কী পরিমাণ কাঁচামাল ক্রয় করা হবে, কাঁচামাল ক্রয়ের অর্থ কোন উৎস হতে সংগ্রহ করা হবে- এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে চলতি মূলধন বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত বলে।
কোম্পানি যদি চলতি মূলধনে অধিক বিনিয়োগ করে বা অব্যহত রাখে, কোম্পানির মুনাফা অর্জন ক্ষমতা কমে যায়। আবার যদি চলতি সম্পত্তিতে বিনিয়োগ কমে যায়, কোম্পানীর চলতি দায় পরিশোধের ক্ষমতা কমে যায় এবং ঝুঁকির পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ চলতি দায় চলতি সম্পদ থেকেই পরিশোধ করতে হয়।
তাই অর্থায়নের কাজ হচ্ছে চলতি সম্পদ ও মূলধন এমনভাবে ব্যবস্থাপনা করা যাতে মুনাফা অর্জন ক্ষমতা কমে না যায়, আবার ঝুঁকির সম্মুখীন হতে না হয়। চলতি মূলধনের প্রধান উপাদান হলো নগদ তহবিল, কাঁচামাল বা উৎপাদিত দ্রব্যের মজুত, বিবিধ দেনাদার, প্রাপ্যবিল ইত্যাদি।
তহবিল ও লভ্যাংশ বন্টন
কোম্পানির মুনাফা বা লভ্যাংশ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বন্টন করা হয়। এটিও অর্থায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। লভ্যাংশ নীতি (Dividend Policy) এর উপর কোম্পানির শেয়ার মূল্য ও প্রসার নির্ভর করে।
অর্জিত মুনাফার কি পরিমাণ শেয়ার মালিকদের মধ্যে বন্টন করা হবে এবং কি পরিমাণ ভবিষ্যত বিনিয়োগের জন্য রেখে দেয়া হবে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এক্ষেত্রে শেয়ার মালিকদের সন্তুষ্টি, শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি ও ভবিষ্যত বিনিয়োগের জন্য সংস্থান রেখে লভ্যাংশ নীতি গ্রহণ করতে হবে।
সুতরাং লভ্যাংশ সিদ্ধান্তের বিষয়টি অর্থায়নের কাজ। এমনভাবে লভ্যাংশ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত যা শেয়ারমালিকদের সন্তুষ্ট করে এবং কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য অর্জনও সহজ হয়।
আরো পড়তে পারেন-
- অর্থায়নের লক্ষ্যসমূহ অর্জনের উপায়
- যৌথ মূলধনি কোম্পানির অর্থায়নের নীতিসমূহ
- সরকারি ও যৌথ মূলধনী কোম্পানীর অর্থায়নের ধারণা ও পার্থক্য
good post