কিভাবে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগ করতে হয়?

আমরা প্রতিনিয়ত নানা কাজে এবং বিভিন্ন বস্তুর পরিমাপ বা পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। পদ্ধতিগুলো হলো এম.কে.এস,এফ.পি.এস,সি.জি.এস এবং এস.আই পদ্ধতি। এখন প্রশ্ন হলো এখানে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি কোনটি? মূলত এস.আই পদ্ধতিকেই আন্তর্জাতিক পদ্ধতি…

Advertisement

আমরা প্রতিনিয়ত নানা কাজে এবং বিভিন্ন বস্তুর পরিমাপ বা পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। পদ্ধতিগুলো হলো এম.কে.এস,এফ.পি.এস,সি.জি.এস এবং এস.আই পদ্ধতি।

এখন প্রশ্ন হলো এখানে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি কোনটি? মূলত এস.আই পদ্ধতিকেই আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।

আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো, আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে কিভাবে ভাগ অঙ্ক করা যায়। তার আগে জেনে আসা যাক, কোন প্রয়োজনে উদ্ভব হলো এই এস.আই পদ্ধতি।

Advertisement
কিভাবে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগ করতে হয়

মনে কর, তোমার একটা জামা সেলাই করা প্রয়োজন। এখন তোমার জামার মাপ তুমি কিভাবে দেবে? অবশ্যই,মাপন স্কেলের সাহায্য নিয়ে ইঞ্চি এককে তোমার জামার মাপ দর্জিকে দেবে।

এখন প্রশ্ন হলো তুমি পৃথিবীর অন্য কোনো জায়গায় গেলেও কি ইঞ্চি এককে জামার মাপ দিতে পারবে? অবশ্যই না। সেখানে তোমাকে মিটার/সেন্টিমিটার এককেও জামার মাপ দিতে হতে পারে। বড্ড মুশকিল! তাই না?

একসময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে একই রাশি পরিমাপের জন্য বিভিন্ন এককের প্রচলন হওয়ায় বেশ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিলো। এই সমস্যার কারণেই বিজ্ঞানীরা ভাবছিলেন কোন উপায়ে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।

Advertisement

সেই ভাবনা থেকেই মূলত ১৯৬০ সাল থেকে পৃথিবীর সব কয়টি দেশে একটি সাধারণ পরিমাপ পদ্ধতি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিকে SI পদ্ধতি (International System of Unit) বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে।

এই এককের সাহায্যে বর্তমানে ঝামেলাহীনভাবে পৃথিবীর সকল দেশে একই নিয়মে প্রত্যেক রাশির পরিমাপ হয়ে থাকে।

উদাহরণস্বরূপঃ দৈর্ঘ্যের একক মিটার,সময়ের একক সেকেন্ড,ভরের একক গ্রাম ইত্যাদি।

Advertisement

আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগ করার পূর্বে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সংখ্যা লেখার পদ্ধতি বা আন্তর্জাতিক গননা পদ্ধতি কেমন হয় তা নিয়ে আলোচনা করা যাক।

আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে সংখ্যা লেখার ক্ষেত্রে একক, দশক এবং শতক পর্যন্ত অঙ্কে দেশীয় রীতির সাথে তেমন কোনো পার্থক্য নেই।

তবে শতকের বামপার্শ্বের তিন ঘর হাজারের জন্য এবং হাজারের জন্য বরাদ্দ তিন ঘরের বামপার্শ্বের তিন ঘর মিলিয়নের জন্য ব্যবহার করা হয়। এরপর মিলিয়নের জন্য বরাদ্দ তিন ঘর পর বামপার্শ্বের ঘরগুলো হলো বিলিয়নের ঘর। যেমনঃ

১৪,২৭৩,৪৩৩,৭৪৫ একটি সংখ্যা। এটিকে আমরা কথায় বলতে পারি, চৌদ্দ বিলিয়ন দুইশ তিয়াত্তর মিলিয়ন চারশো তেত্রিশ হাজার সাতশত পয়তাল্লিশ। এক্ষেত্রে ডানদিক থেকে তিনঘর পর পর কমা বসানো হয়।

এবার উল্লেখিত সংখ্যাটিকে যদি আমরা দেশীয় পদ্ধতিতে লিখি তবে কেমন দাঁড়াবে?

১,৪২৭,৩৪,৩৩,৭৪৫। সংখ্যাটি পড়তে হবে ‘এক হাজার চারশত সাতাইশ কোটি চৌত্রিশ লক্ষ তেত্রিশ হাজার সাতশত পঁয়তাল্লিশ’। এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি,

১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ
১ বিলিয়ন = ১০০ কোটি

কিভাবে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগ করতে হয়

এবার কথা বলব, আন্তর্জাতিক পদ্ধতি এবং দেশীয় পদ্ধতিতে কিভাবে ভাগ করা যায় সেই বিষয়ে। সাধারণ নিয়মে অর্থাৎ দেশীয় পদ্ধতির ভাগ অঙ্কের সাথে আমরা মোটামুটি সবাই পরিচিত।

দেশীয় পদ্ধতিতে ভাগ

এই পদ্ধতিতে আমরা ভাগের ক্ষেত্রে ভাজক, ভাজ্যের বাম দিকে এবং ভাগফল, ভাজ্যের ডান দিকে লিখে থাকি। ভাজককে, ভাগফল দিয়ে গুণ করে ভাগশেষ যোগ করলে ভাজ্য পাওয়া যাবে।

এই সূত্র প্রয়োগ করে আমরা অঙ্কটির শুদ্ধতা যাচাই করতে পারি। নিচের ছবিটি দেখলেই আশা করি সবাই ব্যাপারটি বুঝতে পারবে।

কিভাবে দেশীয় পদ্ধতিতে ভাগ করতে হয়

আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগ

এবার আলোচনা করা যাক, আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে কিভাবে ভাগ করা যায় সেই ব্যাপারে।

আন্তর্জাতিক পদ্ধতি ও সাধারণ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো, ভাগফলের লেখার স্থানটির। আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে আমরা ভাজ্যের ডানদিকে ভাগফলটি না লিখে ভাজ্যের উপরে ভাগফল লিখবো। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

যদি ৩ অঙ্কবিশিষ্ট একটি ভাজ্যের প্রথম দুই ঘর নিয়ে কাজ করে একটি ভাগফল পাওয়া যায়,তবে ভাজ্যের দ্বিতীয় ঘরের উপরে ভাগফলটি লিখতে হবে। বিয়োগ করার পর অবশিষ্ট সংখ্যা বিয়োগফলের পাশে বসাতে হবে। যদি ভাজক থেকে ভাজ্যটি বড় হয় তবে পুনরায় ভাগ করতে হবে এবং ভাগফল,ভাজ্যের উপরে তৃতীয় ঘরটিতে বসবে।

অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে,আমরা ভাজ্যের যতটি অঙ্ক নিয়ে কাজ করবো এবং উপরে ভাগফল বসাবো,তারপর থেকে ভাজ্যের শেষ অঙ্কটি পর্যন্ত অবশ্যই ভাগফল বসাতে হবে। মাঝখানের কোনো ঘরে ভাগফলের জায়গা ফাঁকা থাকবেনা, প্রয়োজনে শূন্য বসাতে হবে। বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার জন্য নিচের ছবিটি দেখতে পারো।

কিভাবে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগ করতে হয়

পূর্বের শ্রেণীতে তোমরা সাধারণ নিয়মে ভাগ অঙ্ক সমাধান করেছো। তাই আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগের পদ্ধতিটি তোমাদের কাছে একেবারেই নতুন।

আশা করি,উপরোক্ত বিষয়বস্তু পাঠের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে ভাগ অঙ্কের পদ্ধতিটি বুঝতে পেরেছো। নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক নিয়মে ভাগ অঙ্ক চর্চা করলে আশা করি এই পদ্ধতিটিও খুব সহজেই রপ্ত করতে পারবে।

তোমাদের সকলের জন্য রইল শুভকামনা।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *