হিসাব সমীকরণ কি, আধুনিক হিসাব সমীকরণ বলতে কি বোঝায়

কোন প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট সম্পদের মালিকানাকে ২ ভাগ করা হয়। যেমন, ১) মালিকের অংশ ও ২) ৩য় পক্ষের অংশ/দাবি ৩য় পক্ষের দাবি বলতে এখানে কি বোঝায়? এজন্য আমরা একটা উদাহরণ খেয়াল করি। ধরি,…

Advertisement

কোন প্রতিষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট সময়ের মোট সম্পদের মালিকানাকে ২ ভাগ করা হয়। যেমন, ১) মালিকের অংশ ও ২) ৩য় পক্ষের অংশ/দাবি

৩য় পক্ষের দাবি বলতে এখানে কি বোঝায়? এজন্য আমরা একটা উদাহরণ খেয়াল করি।

ধরি, জনাব কামাল একটি মুদি দোকান চালু করতে যাচ্ছেন। এ ব্যবসার জন্য নিজ থেকে ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকা ও ব্যাংক থেকে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকা ঋণ নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তার ব্যবসায়ের মোট সম্পদের ভাগ হবেঃ

Advertisement

সম্পদ (৩,০০,০০০) = মালিকের অধিকার (২,০০,০০০) + ৩য় পক্ষের দাবি (১,০০,০০০)
সম্পদ (৩,০০,০০০) =  মালিকানা স্বত্ব (২,০০,০০০) + দায় (১,০০,০০০)

হিসাব সমীকরণ কি

আধুনিক হিসাববিজ্ঞানে মালিকের অধিকারকে মালিকানা স্বত্ব বলা হয় এবং ৩য় পক্ষের দাবিকে দায় বলা হয়। কোন নির্দিষ্ট সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানের মোট সম্পদের পরিমান ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা স্বত্ব ও দায়ের সমান হবে। যে সমীকরণের মাধ্যমে এই সমতা প্রমাণ করা হয় তাকেই হিসাব সমীকরণ বলা হয়।

হিসাবশাস্ত্রবিদগণ হিসাব সমীকরণ (সম্পদ = দায় + মালিকানা সত্ত্ব) এর উপাদানগুলোর পরিবর্তনকারী ঘটনাকে লেনদেন বলে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ সম্পদ, দায় এবং মালিকানা স্বত্বে পরিবর্তন আনয়নকারী ঘটনা লেনদেন হিসাবে গণ্য হয়।

Advertisement

হিসাব সমীকরণের সূত্র

হিসাব সমীকরণের সূত্র হল:

সম্পদ = দায় + মালিকানা স্বত্ব

যেহেতু, একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের লাভ লোকসান সবকিছুর জন্য দায় মালিক, তাই ব্যবসায়ের আয়, ব্যয়, ক্ষতি সবকিছু মালিকানা স্বত্বকে প্রভাবিত করবে। এজন্য আমরা হিসাব সমীকরণকে একটু বর্ধিত করতে পারি।

Advertisement

সম্পদ = দায় + (মালিকানা স্বত্ব + আয় – ব্যয়/ক্ষতি/ উত্তোলন)

আধুনিক হিসাব সমীকরণ বলতে মূলত এই সমীকরণকেই বুঝানো হয়। নিচের ছবিতে হিসাব সমীকরণটি বিস্তারিতভাবে দেখানো হলঃ

হিসাব-সমীকরণ-কি

সম্পদ 

সম্পদ বলতে বুঝায় অর্থনৈতিক পরিসম্পদ যা কোন ব্যবসায়ের মালিকানাধীন থাকে এবং যা মুনাফা অর্জনের কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন : ব্যবসায়ের মালিকানাধীন আসবাবপত্র, দালানকোঠা, কলকব্জা, নগদ টাকা ইত্যাদি।

দায় 

দায় হচ্ছে ৩য় কোন ব্যক্তি বা পক্ষের নিকট ব্যবসায়ের আর্থিক দায়বদ্ধতা যা একটি নির্দিষ্ট সময় পর অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ ব্যবসায়ের মোট সম্পদের উপর তৃতীয় পক্ষের দাবিই হচ্ছে দায়।

মালিকানা সত্ত্ব

ব্যবসায়ের মোট সম্পদ থেকে তৃতীয় পক্ষের দাবি বাদ দিলে যাহা অবশিষ্ট থাকে তাই হচ্ছে মালিকানা সত্ত্ব। অর্থাৎ মোট সম্পদের উপর মালিকের যে দাবি তাই হচ্ছে মালিকানা স্বত্ব। মালিকানা স্বত্বকে প্রভাবিত করে আরো কয়েকটি উপাদান।

১। মালিকের অতিরিক্ত মূলধন বিনিয়োগঃ

মালিক প্রারম্ভিক বিনিয়োগ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নতুন মূলধন বিনিয়োগকে অতিরিক্ত মূলধন বলে। এটি মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি করে।

২। আয়ঃ

প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কাজ/ বিক্রয়/অন্যান্য উৎস থেকে যে আয় হয়। যা মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি করে।

৩। উত্তোলনঃ

মালিক প্রতিষ্ঠান হতে নিজ প্রয়োজনে অর্থ বা কোন সম্পদ গ্রহণ করলে তা উত্তোলন হিসেবে বিবেচিত হবে। যা মালিকানা স্বত্ব হ্রাস করে।

৪। ব্যয় বা খরচ

প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বাবদ বিভিন্ন ব্যয়/ক্রয় বাবদ খরচকে ব্যয় বলে। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষতি/লোকসান ও ব্যয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি মালিকানা স্বত্ব হ্রাস করে। হিসাববিজ্ঞানের এই আধুনিক হিসাব সমীকরণকে ব্যবহার করেই হিসাবের ডেবিট ও ক্রেডিট করা হয়।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *