কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য
জানুন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক কাকে বলে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের পার্থক্য সম্পর্কে আলোচনা।
ব্যাংক সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু আপনি কি জানেন বাণিজ্যিক ব্যাংক কি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক কি। সচরাচর যেসব ব্যাংকগুলো আমরা দেখি, যেখানে আমরা ব্যাংক একাউন্ট খুলে লেনদেন করি এগুলোকে বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।
অপরদিকে একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন, নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা ছাপানো ও নিয়ন্ত্রণ ও সর্বোপরি ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক হলেও এটি কোন ব্যাংকিং কার্যক্রম যেমন হিসাব খোলা, গ্রাহকের টাকা সঞ্চয় করার মত কাজ করে না।
আসুন প্রথমে সংক্ষেপে জেনে নিই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাকে বলে
একটি দেশের মুদ্রানীতি পরিচালনা, অর্থনৈতিক কাঠামো গঠন, নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা ছাপানো, মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ ও সর্বোপরি দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা থাকে তাকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এটি বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ, ১৯৭২-এর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটির কার্যনির্বাহী প্রধানকে গভর্নর বলা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত ব্যাংকগুলোর ব্যাংক। নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংক নিবন্ধন এবং নিয়ন্ত্রণ করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজ।
এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল সংরক্ষণ করে থাকে। এছাড়া এটি বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করে। ১ টাকা, ২ টাকা এবং ৫ টাকার নোট ছাড়া অন্য সকল কাগজের নোট প্রিন্ট করা, বাজারে মুদ্রা প্রবর্তন করাও এই ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এছাড়া এটি সরকারের কোষাগারের দায়িত্বও পালন করে থাকে।
বাণিজ্যিক ব্যাংক কাকে বলে
যে ব্যাংক মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে গ্রাহকের (জনসাধারণ) কাছ থেকে আমানত গ্রহণ, ঋণ বিতরণ কার্যক্রম চালায় তাকেই বাণিজ্যিক ব্যাংক বলে।
আমরা আমাদের এলাকায় যেসব ব্যাংক দেখে থাকি, যেখানে আমরা একাউন্ট খোলার মাধ্যমে টাকা জমা রাখা, উত্তোলন, বিদেশ থেকে টাকা গ্রহণ ও ঋণ নিয়ে থাকি, এগুলোই হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | কেন্দ্রীয় ব্যাংক | বাণিজ্যিক ব্যাংক |
---|---|---|
উদ্দেশ্য | কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের ব্যাংকিং ব্যবসা এবং মুদ্রা বাজারের অভিভাবক হিসেবে সামগ্রিক স্বার্থে কাজ করা | বাণিজ্যিক ব্যাংকের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঋণের ব্যবসার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করা |
গঠন | সরকারের বিশেষ আইনের মাধ্যমে গঠিত হয় | দেশে বিদ্যমান কোম্পানি ও ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়ে থাকে |
সদস্য | কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের মুদ্রা বাজারের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে | বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশের মুদ্রা বাজারের সদস্য হিসেবে কাজ করে |
মালিকানা | কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারি মালিকানাধীন | বাণিজ্যিক ব্যাংক সরকারি, বেসরকারি ও সরকারি-বেসরকারি মালিকানায় হয়ে থাকে |
আমানত ও ঋণ | কেন্দ্রীয় ব্যাংক জনগণের নিকট হতে কোন প্রকার আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানে করে না। | বাণিজ্যিক ব্যাংক জনগণের নিকট হতে বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে আমানত গ্রহন করে এবং এসব অর্থ ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে। |
শাখা | কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোন শাখা নেই। | বাণিজ্যিক ব্যাংক দেশ বিদেশে বিভিন্ন শাখা খুলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে |
প্রতিনিধি | সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে | গ্রাহক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকে। |
মুদ্রা | নোট ও মুদ্রা প্রচলন ও নিয়ন্ত্রণ করে | বাণিজ্যিক ব্যাংক নোট ও মুদ্রার প্রচার ও বিতরণ করে |
নিকাশঘর | কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের আন্ত লেনদেন ও দেনা পাওনার নিষ্পত্তি করে। যাকে নিকাশ ঘর ও বলা হয় | বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নিকাশ ঘর পরিচালনায় সহযোগিতা করে |
বৈদেশিক মুদ্রা | কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রাখে এবং লেনদেন নিয়ন্ত্রণ করে। | কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমাতিক্রমে বৈদেশিক মুদ্রা শুধুমাত্র লেনদেন করতে পারে। |
আরও সম্পর্কিত লেসন
- বিশেষায়িত ব্যাংক কাকে বলে
- অর্থায়ন বা ফিন্যান্স কাকে বলে
- সরকারি এবং যৌথ মূলধনী কোম্পানির অর্থায়নের ধারণা ও পার্থক্য
- ব্যাংক সমন্বয় বিবরণী তৈরি করার ৮ উদ্দেশ্য
- অর্থায়নের লক্ষ্যসমূহ অর্জনের উপায়