কিভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হয়? জানুন উপস্থাপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল

কিভাবে উপস্থাপনা করলে পুরো অনুষ্ঠান হয় প্রাণবন্ত? আসুন জেনে নিই, কিভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হয় এবং উপস্থাপনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল।

Advertisement

একটি আকর্ষণীয় উপস্থাপনা কিভাবে শুরু করতে হয় তা আমাদের অনেকেরই প্রশ্ন। কর্মসংস্থান,  স্কুল-কলেজে অথবা কোন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা শুরু করার ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ নিয়ম ও কৌশল অনুসরণ করতে হয়। 

এই ব্লগে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো কিভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

কিভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হয়

উপস্থাপনার সৌন্দর্য নির্ভর করে একজন উপস্থাপক কিভাবে তার উপস্থাপনা শুরু করছে তার উপর। আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনা শুরু করার জন্য কিছু বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। 

Advertisement

চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে উপস্থাপনা শুরু করতে হয় তার পদক্ষেপ সমূহ।

১. শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করুন

একটি কৌতুহলী প্রশ্ন বা গল্প দিয়ে উপস্থাপনা শুরু করুন যা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করবে এবং আগ্রহ তৈরি করবে। এতে করে তাদের কৌতূহল ও আকর্ষণ এবং উপস্থাপনার প্রতি তাদের মনোযোগ ও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। 

এভাবে উপস্থাপনা শুরু করার মূল উদ্দেশ্যই হলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রোতাদের মনোযোগ ও আকর্ষণীয় ধরে রাখা।

Advertisement

২. নিজের পরিচয় দিন

দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষন করার পর সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দিন এবং আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তাদের সামনে তুলে ধরুন। উপস্থাপনা নিজের পরিচয় দিয়ে শুরু করলে দর্শকদের মনোযোগ ও আগ্রহ ধরে রাখা সহজ হয় এবং এতে করে তারা আপনাকে উপস্থাপক হিসেবে গুরুত্ব দিবে এবং মূল্যায়ন করবে।

৩. লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করুন 

অনুষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে বর্ণনা করুন যাতে শ্রোতাদের উপস্থাপনার বিষয়বস্তু বুঝতে সহজ হয়। এই উপস্থাপনার মাধ্যমে আপনি কি বোঝাতে চান বা কোন সমস্যাটি আপনি সমাধান করবেন তা ব্যাখ্যা করুন।

সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানের একটি ওভারভিউ দিন অর্থাৎ উপস্থাপনার মূল বিষয়গুলো পয়েন্ট হিসেবে তুলে ধরুন যাতে দর্শকরা মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য গুলো বুঝতে পারে এবং সেগুলো অনুসরন করতে পারে।

Advertisement

৪. শ্রোতাদের প্রশ্ন করুন 

অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যেকোনো একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করতে পারেন এবং শ্রোতাদের মধ্যে যারা উত্তরটি জানে  তাদের হাত তুলতে বলুন। 

কোনো একটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে তথ্য জিজ্ঞাসা করুন এবং যারা হাত তুলবে তাদের উত্তর দিতে সহায়তা করুন। এতে করে উপস্থাপক এবং দর্শকদের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি হবে এবং দর্শকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। 

৫. আত্মবিশ্বাসী মনোভাব বজায় রাখুন 

উপস্থাপনার সময় আত্মবিশ্বাসের সাথে এবং স্পষ্ট ভাবে কথা বলার চেষ্টা করুন। আপনার আত্মবিশ্বাস এবং আকর্ষণীয় কথা বলার ধরন শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সহায়তা করবে এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের আগ্রহ ধরে রাখবে।

ভয় পাওয়া বা অস্পষ্টভাবে কথা বলা পরিহার করতে উপস্থাপনার বিষয়বস্তুগুলো আগে থেকেই অনুশীলন করুন। 

৬. সহজ ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলুন 

উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সবসময় সহজ ও শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করুন যাতে আপনার কথায় শ্রোতাদের বুঝতে সুবিধা হয়। সকল বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্ত আকারে এবং সহজ ও শুদ্ধ ভাষায় তুলে ধরুন।

এতে করে শ্রোতাদের মনোযোগ বজায় থাকে এবং তারা সহজেই আপনার কথা বুঝতে পারবে এবং যেকোনো বিষয়ে রেসপন্স করতে পারবে।

আরও পড়ুন:

৭. দর্শকদের বলার সুযোগ দিন 

উপস্থাপনার ক্ষেত্রে উপস্থাপক ও দর্শকদের মধ্যে সম্পর্ক যত ভালো হবে উপস্থাপনা ততবেশি অসাধারণ হবে। তাই অবশ্যই দর্শকদের কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।

আপনি দর্শকদের যেকোন গল্প অথবা অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞাসা করতে পারেন যাতে তারা আগ্রহ ও সক্রিয়তা প্রকাশ করে। উপস্থাপক হিসেবে নিজের কোনো ঘটনা তুলে ধরে সেই সম্পর্কে দর্শকদের কাছে মতামত জানতে চান এতে করে তারাও কথা বলার সুযোগ পাবে এবং উপস্থাপনা আরো আকর্ষণীয় হবে।

উক্ত ধাপগুলো অনুসরণ করে একটি উপস্থাপনা শুরু করলে তা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে এবং আগ্রহ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে এবং উপস্থাপনাকেও আকর্ষণীয় করবে।

উপস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কৌশল

একজন উপস্থাপক এর জন্য উপস্থাপনার বিভিন্ন কৌশলসমূহ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উপস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ কৌশল জানলে আপনি খুব সহজেই শ্রোতার বা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবেন এবং উপস্থাপনাকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারবেন।

  • আপনার দর্শক বা শ্রোতাদের সম্পর্কে জানুন, তাদের চাহিদা গুলো বোঝার চেষ্টা করুন এবং সেভাবেই উপস্থাপনার পূর্ব পরিকল্পনা করুন।
  • উপস্থাপনার মূল বিষয়গুলো একটা ছোট্ট কাগজে পয়েন্ট আকারে লিখে রাখুন। এতে করে কোনো কথা বাদ পড়ার সম্ভাবনা থাকেনা। কখনোই লম্বা স্ক্রীপ্ট লেখা উচিত নয়।
  • নিজেকে সর্বদা প্রস্তুত রাখুন। উপস্থাপনার সকল বিষয়বস্তু আগে থেকেই অনুশীলন করে আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপনা শুরু করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা উচিত।
  • সঠিক অঙ্গভঙ্গি বজায় রাখুন। ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গি করুন এবং দর্শকদের সাথে আই কন্টাক্ট (eye contact) করুন। এটি উপস্থাপক এবং শ্রোতাদের মধ্যে সম্পর্ককে আরও আকর্ষণীয় ও মনোযোগী করে তোলে।
  • আপনার উপস্থাপনায় বিভিন্ন ভিজুয়াল পদ্ধতি যেমন – স্লাইড চার্ট বা মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। এতে করে দর্শকদের মনোযোগ ও আকর্ষণ অনেক বৃদ্ধি পাবে।
  • উপস্থাপনায় শ্রোতাদের সক্রিয় আচরণ নিশ্চিত করুন। তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করুন অথবা তাদের কাছে বিভিন্ন মতামত জানতে চান যাতে তাদের আগ্রহ বজায় থাকে।
  • কৌতুহলী প্রশ্ন বা গল্প দিয়ে শুরু করার চেষ্টা করুন। এর ফলে দর্শকরা খুব বেশি কৌতুহলী এবং আগ্রহী হয়ে পড়বে।
  • উপস্থাপনার মূল বিষয় বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একইসাথে সহজভাবে উপস্থাপন করুন যাতে আপনি কি নিয়ে কথা বলছেন বা কি বোঝাতে চাচ্ছেন তা তারা সহজেই বুঝতে পারে।
  • গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আগে বলার চেষ্টা করুন এবং অসামঞ্জস্য কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকুন।
  • একটি পরিষ্কার ও স্পষ্ট উপসংহার দিয়ে উপস্থাপনার সমাপ্তি করতে হবে। এখানে মূল বিষয়বস্তু গুলো সারাংশ সংক্ষিপ্তভাবে সকলের সামনে তুলে ধরতে হবে। 

উপরোক্ত কৌশলগুলো অবলম্বন করলে একটি সুন্দর ও আকর্ষণীয় উপস্থাপনা সকলের সামনে তুলে ধরা সম্ভব। 

শেষকথা

একটি উপস্থাপনা সুন্দর এবং সফল করার জন্য উপস্থাপনার কৌশল, প্রস্তুতি, বক্তৃতা দেওয়ার দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়বস্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

উপস্থাপনা শুরু করার নিয়ম গুলো জেনে এবং কৌশলগুলো অবলম্বন করে আপনি একটি আকর্ষণীয় উপস্থাপনা করতে সক্ষম হবেন।

Advertisement

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *